শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৬

চলমান ইউনিয়ন পরিষদসহ (ইউপি) বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেই বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। চাকরিচ্যুতিও হয়েছেন কেউ কেউ। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক স্থানেই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনি দায়িত্ব দেওয়ার কারণে এই অনিয়ম বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ভোট অনিয়মে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। অনিয়মে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।  আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা পর্যায়ের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক, ব্যাংকারসহ সরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোট কেন্দ্রের রক্ষক বা অভিভাবকের দায়িত্বে থাকেন। তারা ভক্ষক হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আইনেই ভোট চালু ও বন্ধের সব ক্ষমতা রয়েছে প্রিজাইডিং অফিসারের। অথচ প্রিজাইডিং অফিসাররা অনিয়মের কারণে কেন্দ্র বন্ধ না করে বরং নিজেরাই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে।

গত ১৩ জানুয়ারি কুমিল্লার মুরাদনগরে ইউপি ভোটের মনোনয়নপত্র বাছাইকালে প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে হোমনা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিল্লাল মেহেদীকে প্রত্যাহার করা হয়। ষষ্ঠ ধাপে আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর, বাঙ্গরা পূর্ব ও বাঙ্গরা পশ্চিম এই তিন ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত ৬ জানুয়ারি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা বিল্লাল মেহেদী। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করেন কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার ও জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম। তদন্তেসত্যতা ধরা পড়ে। উক্ত ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তা বিল্লাল মেহেদীকে প্রত্যাহার করা হয়।

সিলেটের জকিগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে সিলমারা ব্যালট পেপার ও সিলসহ আটক হওয়া দুই নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত ৬ জানুয়ারি জৈন্তাপুর থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হাকীম বাদী হয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা আইনে এ মামলা করেন। আটকরা হলেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদমান সাকিব এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হক।

অনিয়মের অভিযোগে মাদারীপুরের শিবচরে চতুর্থ ধাপের তিনটি ইউনিয়নের নির্বাচনে দায়িত্বরত রিটার্নিং কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় ইসি। শিবচরে চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বিভিন্ন অজুহাত ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। গত ৯ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপের শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউপির ভোটে সই জাল করে মনোনয়ন প্রত্যাহার দেখানো হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকারীরা। ভয়াবহ জালিয়াতির এ অভিযোগ তদন্তও করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সত্যতা পাওয়ায় স্থগিত করা হয় ভোট।

গত ২৬ ডিসেম্বর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউপির মনিয়ন্দ উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অলক কুমার চক্রবর্তীকে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার নির্বাচনে এককেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নৌকার সিলমালা ১ হাজার ব্যালট পাওয়া যায়। তিনি সরিষাবাড়ী রিয়াজউদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ছিলেন। এই ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার ও সরিষাবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম তরফদারকে আটক করা হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভোটের ফল নিয়ে অনিয়ম করার অভিযোগে নির্বাচন কর্মকর্তা সজল চন্দ্র সরকারকে গণপিটুনি দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। যদিও ঐ ঘটনায় বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ কাইয়ুমকে আটক করা হয়েছে।

গত ৫ জানুয়ারি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৫ নম্বর পশ্চিম সহাদেবপুর ইউপির ভোটে কেলেংকারির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, ফলাফল কেন্দ্রে ঘোষণা না করে উপজেলায় এসে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার। ঐ ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিজাইডিং অফিসার মেম্বার পদে পরাজিত ব্যক্তিকে কচুয়ায় নিয়ে একইভাবে বিজয়ী ঘোষণা দেন। একইভাবে কেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফল শিট পরিবর্তন করে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বারগাঁও ইউপির ১০ নম্বর কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার এ বি এম নোমান। এই গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। এই ঘটনার পর লাপাত্তা প্রিজাইডিং অফিসার। 

ইত্তেফাক/ ইআ