শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে ঠাঁই পেলো মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর নবজাতক শিশু

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৫৬

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে নাম পরিচয়হীন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর নবজাতক শিশুটি দত্তক নিয়েছেন নিঃসন্তান ফারজানা আক্তার রিপা (২২) ও রফিকুল ইসলাম মুন্সি (৩৬)। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধার দিকে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের যাচাই বাছাই শেষে ১১ দিন বয়সী আহাম্মদ ইসলাম নামের ঐ শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দম্পতিকে লালন পালনের দায়িত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা। 
 
স্থানীয়রা জানান, দুই মাস আগে ঐ গ্রামের শেষ মাথায় পদ্মা নদীর পাড়ে নাম পরিচয়হীন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তারা। তখন সে অসুস্থ ও অন্তঃসত্তা ছিল। কয়েকদিন নদীর পারে খড়ের গাদার ভিতরে ঘুমিয়েছিল সে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় অন্ত:সত্তা এ নারীকে শহীদ খানের ভাঙ্গা চোড়া পরিত্যক্ত একটি ঘরে থাকার ব্যাবস্থা করা হয়। 

স্থানীয়রা আরও জানান, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) ওই নারী (বয়স আনুমানিক ২৮) এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবজাতক ও তার মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সুস্থতার কথা চিন্তা করে শিশু সন্তানটিকে ইউপি সদস্য বাবুল মোল্যা ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছিয়া খাতুন এর তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন। পরে এ নবজাতক সন্তানকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম মুন্সি নবজাতক জন্ম হওয়ার আগে থেকেই তাদের দেখভাল করায় সবার আবেদন যাচাই বাছাই করে রফিকের স্ত্রী ফারজানা আক্তার রিপার কোলে শিশুটিকে তুলে দেন ইউএনও।

আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃসন্তান দম্পতির হাতে নবজাতককে তুলে দেন ইউএনও। ছবি: ইত্তেফাক
 
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হক টিটু, সমাজ সেবা কর্মকর্তা জাহীদ তালুকদার, উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মিজানুর রহমান, স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মোল্যা ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছিয়া খাতুন।

শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও তানজিলা কবির ত্রপা জানান, তিনি তার নৈতিক দায়ীত্ববোধ থেকে এই মানষিক ভারসাম্যহীন অসহায় মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছেন। শিশুটি জন্ম নেওয়ার পরে অনেকেই নবজাতক দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছিল। রফিকের কোনো সন্তান নেই। সে ও তার স্ত্রী আগে থেকেই ওই নারীর দেখাশুনা করে আসছিল। এই মূহুর্তে নবজাতকের সুস্থতা ও বেঁচে থাকার জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুবই প্রয়োজন। উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রফিক ও তার স্ত্রীকে শিশুটিকে নিজের সন্তানের মতন লালন পালন করবেন এমন অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

দত্তক নেওয়া রফিক মুন্সি জানান, তাদের বিবাহীত জীবনের ৪ বছরেও তারা কোন সন্তানের মুখ দেখেননি। এই নবজাতকে তাদের ঘরে তুলতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত। তারা শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে তাদের আবেদন যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্টরা শিশুটিকে তাদের হাতে তুলে দেন। তারা ঐ নারীর দেখাশুনা করার পাশাপাশি নিজের সন্তানের মত আহাম্মদ ইসলাম নামের নবজাতককেও লালন পালন করবেন।

ইত্তেফাক/এসজেড