শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চালকদের লোভেই দুই বাসের মাঝে প্রাণ গেলো শিশু রাকিবের

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:১০

সিগন্যাল ছেড়ে দিলে দ্রুত গাড়ী দু’টি এগিয়ে যাচ্ছিলো, তাদের উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী স্টপেজে যে আগে পৌঁছাতে পারবে সে বাসের জন্য অপেক্ষারত বেশি সংখ্যক যাত্রীদের নিতে পারবে। এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এক গাড়ি অপর গাড়িটিকে ওভারটেক করার সময় দুই গাড়ির মাঝখানে চাপা পড়ে মো. রাকিবুল হাসান (১৪)। 

রাজধানীর মগবাজার মোড়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেপরোয়া বাস চালানোর ফলে দুই বাসের চাপায় পড়ে কিশোরের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক ২ বাস চালককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব’র মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

মো. রাকিবুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
 
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো বাস চালক মো. মনির হোসেন (২৭) এবং মো. ইমরান (৩৪)। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর পল্টন এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২০ জানুয়ারি মগবাজার মোড়ে বিকেল ৫টায় আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুইটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেপরোয়া চালানোর কারণে মো. রাকিবুল হাসান (১৪) নামে এক কিশোর বাস দু’টির মধ্যবর্তী স্থানে চাপা পড়ে। ঘটনাস্থল হতে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ দুর্ঘটনার পর দুই ঘাতক ড্রাইভার বাস দু’টি রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়। নিহতের পরিবারের সদস্যরা রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল এদেরকে গ্রেফতার করে।

র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি মনির হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, সে ৫ বছর যাবৎ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিল। গত ৩ মাস আগে সে বাংলাদেশে তার নিজ গ্রামের বাড়ি ভোলাতে আসে এবং প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকাতে কর্মসংস্থানের জন্য আসে। প্রায় ১ মাসের বেশি সময় ধরে আজমেরী গ্লোরী গাড়ির চালকের সাথে গাড়িতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে হেলপারি শুরু করে। সে মাঝে মধ্যে বাসটি চালনা করতো। গত ২০ জানুয়ারি আনুমানিক ৪টার দিকে গাড়িটি সদরঘাট থেকে গাজীপুর চন্দ্রার উদ্দেশ্যে গাড়ির মূল চালক চালিয়ে নিয়ে আসে। পথিমধ্যে চালক গুলিস্তানে এসে গাড়িটি হেলপার মনির হোসেন এর দায়িত্বে দিয়ে যায় এবং মনির গাড়িটি চালিয়ে মগবাজার মোড়ে নিয়ে আসে। 

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মো. ইমরান হোসেন জানায়, সে ১০/১২ বছর যাবৎ আজমেরী গ্লোরী নামক কোম্পানীর বাস চালাত। সেও একসময় হেলপার ছিল। ৩ বছর আগে সে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেছে। বাসটির মালিক এর নিকট হতে দৈনিক ৩৫০০/- টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করে। গত ২০ জানুয়ারি ৪টায় যথারীতি বাসটি নিয়ে সদরঘাট থেকে গাজীপুর চন্দ্রার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরেই এ ঘটনা ঘটে। আসামি মো. ইমরান এর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ১টি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।

ইত্তেফাক/কেএইচ/এসজেড