শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাকায় অ্যাম্বুলেন্সেই আসছে সিংহভাগ গাঁজার চালান!

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:৪৫

মাদক দ্রব্যের মধ্যে গাঁজার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মাদক কারবাকারিরা এখন বেশি করে ঝুঁকছে গাঁজার কারবারিতে। দেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্ত এলাকার কয়েক শত মানুষ গাঁজা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা আনছে গাঁজার বড় চালান। অনেক সময় সীমান্তের ওপারের গাঁজা কারবারিরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে গাঁজা সীমান্ত এলাকার কোনো উঁচু গাছের ঢালে বেঁধে রেখে যায়। পরে সুবিধামতো বাংলাদেশের গাঁজা কারবারিরা সংগ্রহ করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঢাকায় চালান করে। 

তবে আগে গাঁজার চালান ঢাকায় আসত ট্রেন, বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক হওয়ায় এখন ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করেছে গাঁজার কারবারিরা। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সে গাঁজা বহন অনেকটা সহজ। সে কারণে গাঁজা কারবারিরা গাঁজা বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। 

গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই জানিয়েছে গাঁজা কারবারি মো. হান্নান। তিনি নিজেই একাধারে গাঁজা কারবারি পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স চালক। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর টিটি পাড়া বস্তি এলাকা থেকে ১০০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে অ্যাম্বুলেন্স চালক হান্নান ও তার দুই সহযোগীকে। জব্দ করা হয় গাঁজা বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্সে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. আবু আশরাফ সিদ্দিক।

এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত হান্নান ও তার দুই সহযোগী মো. রমজান মিয়া ও মো. ওমর আলী। তারা পেশাদার গাঁজার কারবারি। তারা ঢাকার বাইরে থেকে গাঁজার চালান এনে নির্দিষ্টস্হানে পৌঁছে দেন। প্রতি কেজি গাঁজা বহনের জন্য তারা পান ১ হাজার টাকা। তাদের তিন জনের বাড়িই কুমিল্লায়। হান্নান অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে মাঝেমধ্যে রোগী বহন করেন। কিন্তু তার মূল টার্গেট গাঁজার চালান বহন করা। হান্নান আরো জানান, তার মতো এখন অনেকেই অ্যাম্বুলেন্সে করে গাঁজার চালান ঢাকায় আনছে। কারণ অ্যাম্বুলেন্স বলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়।

হান্নান আরো জানান, সাম্প্রতিক সময় রাজধানীতে গাঁজার চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে দাম। আগে প্রতি কেজি গাঁজা বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখন প্রতি কেজি গাঁজা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। হান্নান প্রতি সপ্তাহে অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই থেকে তিনটি চালান ঢাকায় নিয়ে আসেন। আটককৃত গাঁজার চালান পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল পল্টন এলাকায়।

সম্প্রতি গাঁজার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, গাঁজার চাহিদা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ঢাকায় বেশি। ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট থাকে মাদকের চালান ঢাকায় আনার।

যেভাবে আসে গাঁজা: প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ভারত থেকে আসা গাঁজার চালানের বড় অংশ আসে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা দিয়ে। মাদক ব্যবসায়ীরা এসব চালান ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে গন্তব্যে পাঠায়। কখনো ট্রেনে, কখনো পণ্যভর্তি ট্রাকে। গাঁজা ব্যবসায়ীদের আস্তানা ঢাকার উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায়। 

ইত্তেফাক/এএইচপি