বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিপর্যয়ের মুখে বরিসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ! 

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:১০

করোনা মহামারির প্রথম বছরে যুক্তরাজ্যে এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। লকডাউন জারি করে কোটি কোটি মানুষকে ঘরবন্দি করা হয়। কিন্তু সে সময় অনেকটাই পার্টি মুডে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২০২০ সালে মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং বাসা ১০ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে কর্মীদের সঙ্গে মদ্যপান আর চিজ খেয়ে পার্টি করেছিলেন বরিস জনসন।

এর কয়েক দিন পর তিনি নিজের ব্যক্তিগত সহকারী আয়োজিত আরেকটি পার্টিতে অংশ নেন। ওই বছরের জুনে বরিস কেবিনেট কক্ষে তার জন্মদিনের পার্টি করেন। যেখানে ৩০ জনের বেশি সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব উপস্হিত ছিলেন। দুই বছরে কঠোর লকডাউন ও বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে বরিস জনসন কমপেক্ষ ১২টি পার্টিতে যোগদান করেন। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর তোলপাড় চলছে ব্রিটিশ রাজনীতিতে। জনসনের পদত্যাগ দাবি করছেন তারই দলেরই শীর্ষ নেতারা। জনমতও তার বিরুদ্ধে।

গত সপ্তাহে বরিস জনসনের পার্টি কেলেঙ্কারির ওপর প্রশাসনিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। ওই রিপোর্টে নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনের পর পার্টিগেট নিয়ে আরও কোণঠসা বরিস জনসন। গত সোমবার পার্লামেন্টে বিরোধীরা তাকে চেপে ধরেন, একের পর এক প্রশ্ন করেন। করোনাবিধি ভেঙে ‘নিজের মদ নিজে আনো’ পার্টি নিয়ে জনসন এর আগে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সেদিনও আবার তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন। জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সু গ্রে তার তদন্ত রিপোর্টে বলেছেন, এই ধরনের পার্টি নেতৃত্বের ব্যর্থতার দিকটাই দেখিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু পার্টির অনুমতি দেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি।

রিপোর্টে গ্রে পরিষ্কার করে বলেননি, এই পার্টি করে নিয়ম ভাঙা হয়েছে কি না। তবে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তার পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট কড়া। তিনি বলেছেন, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট এবং ক্যাবিনেট অফিস বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দেওয়া ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। গত ডিসেম্বরে পার্টি কেলেঙ্কারির পর জনসনের ওপর পদত্যাগের চাপ বেড়েছে। এমনকি তার দলের বেশ কিছু পার্লমেন্ট সদস্যও এই দাবি তুলেছেন।

এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বরিস জনসনের ঘনিষ্ঠ পাঁচ সহযোগী পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পদত্যাগ করেন বরিসের কার্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর জ্যাক ডয়েল, হেড অব পলিসি মুনিরা মির্জা, চিফ অব স্টাফ ড্রান রোজেনফিল্ড ও সরকারের জ্যেষ্ঠ আমলা মার্টিন রেনোল্ডস। পরদিন শুক্রবার পদত্যাগ করেন বরিসের শিক্ষা নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এলিনা নারোজানস্কি।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, এই পদত্যাগের কারণে বরিসের ওপর চাপ অনেকটাই বেড়েছে। যদিও ইতিমধ্যে সেসব পদে নিয়োগের কথা জানিয়েছেন বরিস জনসন। তবে তার অনেক বিশ্বস্ত সহযোগীর আশঙ্কা করছেন শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হতে পারে বরিস জনসনকে।

বরিসের সহযোগীদের পদত্যাগের পর হাউজ অব লর্ডসের একজন কনজারভেটিভ সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে বরিস জনসন পার্টির নেতৃত্বে থাকবেন কি না, সে বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। পার্টি কেলেঙ্কারি নিয়ে যে পরিস্হিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে বরিস জনসন কি পার্টি এবং জনগণের মধ্যে আস্থা পুনরায় তৈরি করতে পারবেন।

এই কেলেঙ্কারির মুখে জনসনের প্রতি তার দেশের জনগণের সমর্থনও কমে গেছে। গত ৩০ বছরের মধ্যে কোনো প্রধানমন্ত্রী প্রতি সমর্থন এখন সবচেয়ে নিচে। বরিসের সঙ্গে সঙ্গে তার পার্টির প্রতিও সমর্থন কমেছে। সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, জনসন সত্যি বলছেন সেটা বিশ্বাস করেন মাত্র ১৩ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক। আর ৬৪ শতাংশ তার কথা বিশ্বাস করছেন না।

কনজারভেটিভ পার্টির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কয়েকজন এমপি প্রকাশ্যে বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ইতোমধ্যে ১৭ জন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি জনসনের প্রতি অনাস্হা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

দলের ১৯২২ কমিটির কাছে ৫৪ জন এমপি চিঠি দিয়ে অনাস্থা জানালে নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে অনেক কনজারভেটিভ এমপি জানিয়েছেন তারা সু গ্রে এবং পুলিশের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে চান। যদিও জনসন এখনো তার অবস্হানে অটল রয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিতে চান। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েই শঙ্কিত তার কাছের নেতারা। আর শেষ পর্যন্ত তিনি সরে যেতে বাধ্য হলে একই সঙ্গে অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও।

ইত্তেফাক/টিআর