শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইয়াবা ব্যবসার জন্য ছেড়ে গেছে স্বামী ও সন্তান

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৩০

ঝর্না বেগম। বয়স ৫০। স্বামী মো. ইসমাইল। রাজধানীর স্বামীবাগলেনের স্থায়ী বাসিন্দা। সংসারে স্বামী আছে, আছে সন্তান। কিন্তু শুধু ইয়াবা ব্যবসার কারণে স্বামী সন্তান তাকে ছেড়ে গেছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু ঝর্না বেগম এরপরও ছাড়তে পারেননি ইয়াবার ব্যবসা। নিজে যেমন ইয়াবা ব্যবসা করছেন, তেমনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছেন ভাইয়ের স্ত্রী এমিলিকে। ক্রসফায়ারের সময় ইয়াবা ব্যবসা করেছেন অতি গোপনে। কিন্তু ক্রসফায়ার আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় পর আবার ইয়াবার ব্যবসা শুরু করেছেন পুরোদমে। নিজে এবং ভাইয়ের স্ত্রী এমিলিকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন শক্ত সিন্ডিকেট। সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ঝর্না বেগম।

একই সঙ্গে ধরা পড়েছে তার তিন সহযোগী। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসার বর্তমান অবস্থার কথা। বলেছেন বর্তমানে মিয়ানমারে তৈরি ইয়াবার চাহিদা সর্বাধিক। ইন্ডিয়ায় তৈরি ইয়াবার চাহিদা কম। ক্রসফায়ার বন্ধ হয়ে যাবার পর এখন টেকনাফ থেকে প্রতিদিন কয়েকশ চালান আসছে রাজধানীতে। পাশাপাশি ক্রসফায়ারের সময় ইয়াবা কারবারে ধস নেমেছিল তা পুষিয়ে নিতে ইয়াবা কারবারিরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের দেওয়া তথ্যে খোদ মাদক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতিঝিল সার্কেলের পরিদর্শক মো. সুমনুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম দুই দিন অভিযান চালিয়ে সবুজবাগের পাটওয়ারী গলি, যাত্রাবাড়ীর উত্তর বিবিরবাগিচা ও সায়েদাবাদ হুজুরবাড়ী গেট এলাকা থেকে ঝর্নাসহ চার জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় প্রায় ৯ হাজার পিস ইয়াবা। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন শিউলি আক্তার, ছেলে ইমরান হোসেন, ঝর্না বেগম ও মানছুরা আক্তার। তবে এ চক্রের অন্যতম হোতা ঝর্নার ভাইয়ের স্ত্রী এমিলিকে গ্রেফতার করা যায়নি।

ঝর্না বেগম জানিয়েছেন, ইয়াবা কারবারের জন্য তার স্বামী ও ছেলে তাকে ছেড়ে গেছে। তারা বহুবার নিষেধ করেছে ইয়াবা কারবার ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঝর্না বেগম বলেছেন, ইয়াবা কারবার তার কাছে নেশায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কখনো ইয়াবার নেশায় আসক্ত হননি।

ক্রসফায়ারের ভয়: মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইয়াবা কারবারিদের একসময় ভয় ছিল ক্রসফায়ারের। কিন্তু বছর খানেক ধরে ক্রসফায়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের মনোবল এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় চাঙ্গা হয়েছে। কারণ ইয়াবা চালানসহ ধরা পড়লে আর না হোক ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হতে হবে না। সর্বোচ্চ কয়েক দিনের রিমান্ডের মুখোমুখি হতে হবে। এরপর জেলবাস। তাও খুব বেশি দিন থাকতে হবে না। এ অবস্থায় ইয়াবা কারবারিরা এখন কোনো কিছুতেই তোয়াক্কা না করে বিরামহীনভাবে ইয়াবার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে প্রতিদিন কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা থেকে রাজধানীতে আসছে কয়েকশত ইয়াবার চালান। সাধারণত ইয়াবার চালান আসতো ব্যক্তিগত যানবাহনে। ইয়াবার সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইয়াবার দামও অনেকটা কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতিপিস ইয়াবা বিক্রি হতো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। সেখানে এখন পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে।

মিয়ানমারের ইয়াবা ও ভারতের ইয়াবা: ক্রসফায়ারের ভয়ে গত দুই বছর ধরে কক্সবাজার এলাকা থেকে ইয়াবার চালান আসা অনেকটা কমে গিয়েছিল। এ অবস্থায় ইয়াবার কারবারিরা কুমিল্লা ও সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতের ইয়াবার চালান আসতো। কিন্তু সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের ইয়াবার চালান আসা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইয়াবা কারবারিরা এখন এতটাই শক্তিশালী যে তারা কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোনো স্পটে বা বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় ইয়াবা কারবারিরা প্রথমেই প্রশ্ন করে, ‘আপনারা কোন সংস্থা থেকে এসেছেন। কারণ র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশকে তারা কিছুটা ভয় পায়। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের কথায় আবগারি বিভাগ। এ সংস্থাকে তারা আমলে নেয় না। কারণ র‌্যাব বা পুলিশ আটক করলে জিজ্ঞাসাবাদে কঠোর নির্যাতন ভোগ করতে হয়। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা তেমন আচরণ করেন না। তাছাড়া গ্রেফতার হলে আদালতে তাদের পক্ষে নামিদামি উকিল দাঁড়ায়। কোনো না কোনোভাবে তারা কিছুদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে যায়।

ইত্তেফাক/এমআর