বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিজট!

অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি, পরবর্তী সেশনে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় আরো ৭ লাখ শিক্ষার্থী

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:১০

২০২০-২১ সেশনের ভর্তি প্রক্রিয়া এখনো শেষ করতে পারেনি অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যদিকে পরবর্তী সেশনের ভর্তির জন্য গতকাল থেকে অপেক্ষা করছে প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী। ফলে মুখোমুখি রয়েছে দুটি একাডেমিক সেশনের শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে সেশনজট বা সংকট যাতে সৃষ্টি না হয় সে পথ দ্রুত খুঁজে বের করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং উপাচার্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত রবিবার ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জনের বেশি শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এর মধ্যে ৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় স্কোর রয়েছে। এরা ২০২১-২২ সেশনে ভর্তি হবে। কিন্তু এদের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কবে বৈঠক করবেন উপাচার্যরা তা-ও কেউ বলতে পারছেন না।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার কারণে আমরা আট মাসের বেশি সময় পিছিয়ে পড়েছি। ২০২২ সালে এসেও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। তাহলে ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম করে শুরু হবে, কবে শেষ হবে বা কবে ক্লাস শুরু করতে পারবে। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। অভিভাবকরা বলেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এক বছরেরও বেশি সময় হারিয়েছে। নতুন এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরাও প্রায় আট মাস হারিয়েছে। তাই সরকার এবং ইউজিসিকে এই একাডেমিক ক্ষতি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনার প্রকোপ বেশি থাকায় পরীক্ষা ছাড়াই আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে সবাইকে পাশ করানো হয়; এতে জিপিএ-৫ পেয়েছে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এই ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। ঐ ফল প্রকাশের এক বছর পরও কেন ঐ স্তরের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা যেমন একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গতকাল প্রকাশিত ফলে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ আলমগীর গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে অনেক বেশি দেরি করেছে। প্রশাসনিক দুর্বলতা ছিল। পরীক্ষার তারিখও দুবার পিছিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। এসব কারণে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করা যায়নি। আগের দুর্বলতা কাটিয়ে এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে বলে তিনি জানান।

প্রফেসর আলমগীর আরও জানান, মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে একটি রোড ম্যাপ তৈরি করতে পারে। আগে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবে। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জানান, মে মাসের আগে হয়তো কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (বিডিইউ) এর উপাচার্য এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘কবে ২০২১-২২ সেশনের বৈঠক হবে তা এখনো জানা যায়নি। তবে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা আরো কার্যকর হবে বলে তিনি মনে করেন। ’

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে আছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম দেরি হওয়ায় গত বছর অনেক শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিমধ্যে দু-একটি সেমিস্টার শেষও করেছে। এবারও এই সুযোগটি নিতে পারে তারা।

এদিকে সেশনজটের শঙ্কার পাশাপাশি ভালো ফল করেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ হারানোর আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। কারণ জিপিএ-৫ থাকা সত্ত্বেও একটি ভালো সংখ্যক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বঞ্চিত হবে। তবে আসনের কোন সংকট হবে না।

ইউজিসির তথ্য অনুসারে, উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ হাজার আসন আছে। এছাড়া ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৮১১, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রথমবর্ষে ও অনার্স মাদ্রাসায় ৬০ হাজার আসন আছে। এছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৪০৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০ আসন আছে। চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন আছে।

ইত্তেফাক/এমআর