শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এমপির নামে ৩৫ বিঘা জমির জাল দলিল

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:১৫

জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের মালিকানাধীন জমির জাল দলিল রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ডরিন পাওয়ার হাউজ অ্যান্ড টেকনোলজিস লি.’-এর বিরুদ্ধে। মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব আব্দুস সাত্তার মিয়ার প্রায় ৩৫ বিঘা জমি দালাল চক্র ডরিন পাওয়ারের নামে জাল দলিল করে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ জাল দলিল হয়েছে ডরিন পাওয়ারের ব্যবস্হাপনা পরিচালক ও ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নামে।

এদিকে এই জাল দলিল বাতিলের জন্য ইতিমধ্যে আদালতে মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ও জমির প্রকৃত মালিক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব আব্দুস সাত্তার মিয়া। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট আদালতে তিনি মামলাটি করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, দালালদের সহায়তায় ভুয়া মালিক সেজে ঐ প্রতিষ্ঠানকে অন্যের জমির জাল দলিল রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মো. আব্দুল সত্তার হাওলাদার।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা গ্রামের সানবান্দা মৌজার অন্তভু‌র্ক্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলা আব্দুস সাত্তার মিয়ার প্রায় ৩৫ বিঘা জমি জালিয়াতি করে জাল দলিল করা হয়। দালাল চক্রের মূল হোতা মোংলা পৌর শহরের ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা মো. হাসমত আলী বরিশালের মো. আব্দুল ছত্তার হাওলাদারকে মালিক সাজিয়ে ঐ জমি ডরিন পাওয়ারের কাছে বিক্রি করান।

এ বিষয়ে ডরিন পাওয়ারের এমডি তাহজীব আলম সিদ্দিকী এমপি দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মনজুরুল নাসিম বলেন, দালাল হাসমত আলী চক্রের খপ্পরে পড়ে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। তাদের (দালাল) বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়া হবে। জালিয়াতির মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন দালাল হাসমত আলী। তবে এনিয়ে সামনা-সামনি কথা বলবেন বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

মোংলা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, জানতে পেরেছি যে, ঐ কথিত দলিলটি জাল হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক (মহুরী) আবুল কালাম শেখকে গত ২৬ জানুয়ারি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে দলিল লেখক আবুল কালাম শেখ বলেন, দলিল তৈরির পর রেজিস্ট্রির আগে সমুদয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব সাব-রেজিস্ট্রারের। কিন্তু তিনি সেটি না করে উলটো আমাকে অভিযুক্ত করে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। 

অপরদিকে যে জালিয়াতির দলিল হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা হলেও দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন ভুক্তভোগী বলেন, হাসমতের বিরুদ্ধে এমন জাল-জালিয়াতির আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক হাসমত গং চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, যেহেতু আমিও বিষয়টি জেনেছি, তাই এ দলিলের নামিজারি হবে না। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। ঘটনাটি সাব রেজিস্ট্রার আমাকে বললে আমি তাকে উভয় পক্ষকে ডাকতে বলেছি। দালাল হাসমতের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। 

ইত্তেফাক/এসজেড