এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পাঁচদিন পার হয়েছে। পঞ্চম দিনে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলনে মুখরিত ছিল ক্যাম্পাস।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মঞ্চ থেকে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পঞ্চম দিনের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সকাল ১০টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এসময় সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, মিথ্যা তথ্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করার কারণে ৭১ টিভির গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আজিজুর রহমান রনিকে বয়কট করা হলো। এছাড়া ধর্ষকদের ফাঁসি এবং হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এছাড়া এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই।
এদিকে সোমবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা চত্বরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে 'জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড' ব্যানারে শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ক্যাম্পাসে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের ফাঁসি ও হামলাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আদম বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত। আমরা ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। এখানে কোনো নেগোসিয়েশন হবে না।
কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের নেপালি শিক্ষার্থী বিবেক করণ বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা স্বাধীন নয়। আমরা ধর্ষণমুক্ত সমাজ চাই।
আরেক নেপালি শিক্ষার্থী অস্পিতা কার্তিক বলেন, আমরা এখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে এই দেশের বিচারব্যবস্থায় আমরা এখনো বিশ্বাস করি। এই ঘটনায় জড়িত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এছাড়া বিকাল সাড়ে চারটায় মুখে কালো কাপড় ও হাত বেঁধে ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা এবং ধর্ষণের বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। এর বাইরে সন্ধ্যা সাতটায় ধর্ষকদের ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে হামলাকারীদের কুশপুত্তলিকা দাহ করবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বৈঠকের মাধ্যমে মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে, তবে ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। আর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাত সাড়ে ৯টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমান বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। এপর্যন্ত ধর্ষণ মামলায় আটককৃত ছয় আসামীকে আদালতের মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা পাঁচদিন ধরে চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন।