শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৩ ইউনিটে ১৫০ আসন শূন্য

১০ম মেধাতালিকার পরও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না জবি

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ০৪:০১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য ১০টি মেধাতালিকা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে প্রথমবর্ষের সার্বিক ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী না পাওয়ার পেছনে করোনার প্রকোপে দীর্ঘ সময় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নানান অব্যবস্থাপনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা যায়, গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান ইউনিটের, ২৪ অক্টোবর মানবিক ইউনিটের এবং পহেলা নভেম্বর বাণিজ্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ২০ অক্টোবর বিজ্ঞান ইউনিটের , ২৬ অক্টোবর মানবিক ইউনিটের এবং সর্বশেষ ৩ নভেম্বর বাণিজ্য ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়।

গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফল প্রকাশিত হবার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ফল প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আবেদন শুরু হয় গত বছরের ১৫ নভেম্বর। আবেদন চলে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সপ্তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞান ইউনিটে ২৩ হাজার ৯৫৫ জন, মানবিক ইউনিটে ৯ হাজার ৯৪০ জন এবং বাণিজ্য ইউনিটে ৭ হাজার ৭৬২ জন ভর্তিচ্ছু আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।

পরদিন ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নির্ধারিত আসনে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় পরবর্তী সময় পালাক্রমে মোট সাতটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে এতেও নির্ধারিত আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময় ফাঁকা আসন পূরণে গত ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি গণসাক্ষাত্কার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম থেকে সপ্তম মেধাক্রমে বিষয় বরাদ্দ পেয়েও যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হননি তাদেরও সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে গণসাক্ষাৎকারে শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি না মেলায় পরবর্তী সময় আরও একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয় ৮ মার্চ থেকে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করার। তবে ক্লাস শুরু করার আগেই ফাঁকা থাকা আসন পূরণে গত মঙ্গলবার আবারও গণসাক্ষাৎকার আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞান ইউনিটে ৭ হাজার ৬৫২ থেকে ১২ হাজার মেধাক্রম পর্যন্ত এবং মানবিক ইউনিটে ২ হাজার ৫১৭ থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেধাক্রম পর্যন্ত সাক্ষাৎকার আহ্বান করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এ সাক্ষাৎকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, এবার প্রথমবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না পাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ করোনা ভাইরাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনাকালীন বন্ধের সময়েও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী তাদের সময় বাঁচানোর জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে। এতে করে এখন শিক্ষার্থীদের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের এই সংকটের পেছনে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কোনো কারণ রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ লাঘব হয়েছে। অন্যান্য বছর শিক্ষার্থীদের এ সুযোগ ছিল না। তাই এক্ষেত্রে গুচ্ছের কোনো ভূমিকা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, এবারের যে শিক্ষার্থী সংকট তা খুব অনাকাঙ্ক্ষিত। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য আয়োজন করা হলেও এতে কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল। এই ব্যবস্থাটিকে আরও ভালো করা যেতো। এর কুফল শিক্ষার্থীদের ভোগাচ্ছে।

ইত্তেফাক/এমএএম