সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

লাউয়াছড়া উদ্যানের সড়ক-রেলপথে মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণী

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ০৭:০৪

জীববৈচিত্রের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ বনগুলোর একটি হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। আয়তনের দিক দিয়ে ছোট হলেও এই বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। তবে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়া সড়কপথ, রেলপথ ও বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে দুর্ঘটনায় প্রতি বছর শতাধিক প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। এভাবে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু প্রতিরোধে রেল ও সড়ক পথে বন্যপ্রাণীর চলাচলের জন্য সুরঙ্গপথ ও ওভারব্রিজ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, লাউয়াছড়ায় উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমা পরা বানর, চিতাবাঘ, মথুরা, বুনোমুরগি, ধানেশ, অজগর, দাঁড়াস, কেউটে, সুতানলী, ব্যাঙ, গিরগিটি, তক্ষক, পেঁচাসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। রেল লাইন ও রাস্তা দিয়ে পারাপারের সময় এসব প্রাণী দুর্ঘটনায় পড়ে। তাছাড়া বিদ্যুতায়িত হয়েও অনেক প্রাণী মারা পড়ে। তবে বনের মধ্যে সব স্থানে মানুষের চলাচল না থাকায় এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই নজরে আসে না। সাধারণত মানুষের চলাচল আছে এমন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণী মারা গেলে সেটিই হিসাবে আসে। 

সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাস্তবে অনেক বেশি প্রাণীর মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। ইতিপূর্বে লাউয়াছড়ায় দীর্ঘসময় ধরে গবেষণা করতে আসা সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার জানান, ২০১১ সালে বাংলাদেশ পাইথন প্রজেক্টের অধীনে এই বনে অজগর সাপের ওপর গবেষণা শুরু হলে বনের জীববৈচিত্র নানা ক্ষেত্র উঠে আসে। 

শাহরিয়ার সিজারের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে এক বছরে লাউয়াছড়ায় ৭০০ সাপ মারা গেছে এবং এর অধিকাংশই জানকিছড়া এলাকায়। 

লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মো. আহাদ মিয়া ও লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারচিয়াঙ বলেন, এই বনে গাড়িচাপা পড়ে আর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বছরে দুই শতাধিক প্রাণী মারা যায়। বন্যপ্রাণীর মৃত্যুরোধে রেল ও সড়কপথে মাঝে মাঝে সুড়ঙ্গপথ-ওভারব্রিজ করে দিলে প্রাণী স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারবে। আর বিদ্যুৎ লাইনে ইনসুলেটেড তার লাগিয়ে দিলে প্রাণী মারা যাওয়ার ভয় থাকবে না। 

লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম যানবাহনে কাটা পড়ে বন্যপ্রাণীর মারা যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সড়ক ও রেলপথের সব স্থানে সবসময় চলাফেরা না থাকায় মারা যাওয়া সবগুলো প্রাণী নজরে আসে না। 

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সড়কে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়া রোধে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সচেতনতা কার্যক্রমও শুরু হবে।

 

ইত্তেফাক/এমএএম