শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মির্জাপুরে জলাবদ্ধতার বলি কয়েকশ একর ফসলি জমি

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২২, ০২:৪৬

অপরিকল্পিত মিল-কারখানা ও খাল ভরাটের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কয়েকশত একর ফসলি জমি অনাবাদী হয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পাঁচ গ্রামের কৃষক। পাঁচ গ্রামের কয়েকশত একর ফসলি জমি জলাবদ্ধতায় এখন কচুরিপানায় ভরপুর। গত ৫-৬ বছর ধরে জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে এই পাঁচ গ্রামের অন্তত দেড় হাজার কৃষকের কপাল পুড়েছে। 

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১০নং গোড়াই ইউনিয়নের রশিদ দেওহাটা, কোদালিয়া, বাইমাইল, সোহাগপাড়া এবং রহিমপুর গ্রামের জমিতে জলাবদ্ধতার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৬ মার্চ) ঐ এলাকা সরেজমিন ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা ঘটনার সত্যতা তুলে ধরেন।

জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেওহাটা থেকে সোহাগপুর বাজার পর্যন্ত ৩ কি. মি. রাস্তার দুই পাশে রয়েছে দেওহাটা, কোদালিয়া, বাইমাইল, সোহাগপাড়া এবং রহিমপুর গ্রাম। এই গ্রামগুলো মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল এলাকা। রশিদ দেওহাটা গ্রামের কৃষক দেওয়ান জাফার আহমেদ (৬০), আবুল হোসেন (৫৬) এবং কোদালিয়া গ্রামের মালেকা বেগম (৫৫)-সহ অন্তত ১৫ জন কৃষক অভিযোগ করেন, গত ৭-৮ বছরের ব্যবধানে কৃষি নির্ভর জমির আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি মিল-কারখানা। মিল-কারখানার মালিকগণ স্থানীয় কিছু অসাধু চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের সুবিধার জন্য দুই পাশের খাল ভরাট করে গড়ে তুলেছেন মিল-কারখানাসহ পাকা স্থাপনা এবং রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। ফলে খালগুলো বন্ধ হয়ে জমির পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না।

পানি প্রবাহ না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে কোনো ফসল ফলাতে পারছেন না। সারা বছরই থাকে কচুরিপানায় ভরপুর। এক সময় এই জমিতে ধান, পাট, সরিষা, গম, আলু, আখ ও বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ হতো। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন। গত কয়েক বছর ধরে আনাবাদী জমিতে সারা বছরই জলাবদ্ধতার কারনে কোন ফসল ফলাতে না পেরে এখন চরম বিপাকে পরেছেন বলে অভিযোগ করেন।

কোদালিয়া গ্রামের মো. শাজাহান মিয়া (৫০) এবং সোহাগপাড়া গ্রামের মো. বাবুল সিকদারসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ফসলি জমিতে সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকলেও খাল খনন বা জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কোন মাথা ব্যথা নেই। ভোটের সময় এলে এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ মেম্বারগণ নানা জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই এলাকার কৃষকদের ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর আর তাদের কোন খবর থাকে না। বিষয়টির দিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উক্ত ব্লকের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবু সুনিল কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার কৃষকরা জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না। কয়েকশ একর ফসলি জমি অনাবাদী থাকে। ফলে প্রতি বছর তারা বিপুল অংকের টাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকগণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে, স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (সেচ) এর সঙ্গে পরামর্শ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি