শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুপারির বাম্পার ফলনেও হতাশ চাষিরা   

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ১৪:২৯

কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বনে দিন দিন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সুপারি চাষ বাড়ছে। স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় সুপারি চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। এবার চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলনও হয়েছে। তবে ন্যায্য দাম না থাকায় চরম হতাশায় ভুগছেন চাষি-ব্যবসায়ীরা।    

চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে

এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে অধিকাংশ কৃষক পতিত জমিসহ নিজেদের বসতভিটায় সুপারির বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন ও দাম না থাকায় প্রান্তিক চাষিদের মুখে হাসি নেই। কারণ দেশের দক্ষিণ অঞ্চল সিলেট, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় এ বছর সুপারির ব্যাপক আমদানি ও দেশি সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় সুপারির দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় সব চেয়ে কম। স্থানীয় বাজারে সুপারির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় সুপারি চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।     

উপজেলার ফুলবাড়ী বাজার, বালারহাট, গংগাহাট, কাশিপুর, বেড়াকুটি বাজার, খরিবাড়ীবাজার, নেওয়াশী বাজার ও বড়ভিটা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সুপারি কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন সুপারি চাষি-ব্যবসায়ীরা। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় বাজার সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বাজারগুলোতে সুপারি চাষিদের ভাষ্যমতে গত বছর যে সুপারির পোন ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর সেই সুপারির পোন প্রতি যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। একটু বড় সাইজের সুপারির প্রতি পোন ২৫০ টাকা সর্বোচ্চ দর। ফলে অর্ধেক দামও পাচ্ছেনা কৃষক। 

ন্যায্য দাম না থাকায় চরম হতাশায় ভুগছেন চাষি-ব্যবসায়ীরা

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সুপারি চাষি কামরুল ইসলাম ও আলম মিয়া তারা প্রত্যেকেই চার-পাঁচ বিঘা জমিতে সুপারি চাষ করেন করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় খুশি হলেও ফলন অনুযায়ী ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তারা দুইজনেই চরম হতাশাও ব্যক্ত করেছেন।  
 
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী নবিউল ইসলাম জানান, এ বছর সুপারির ভালো ফলন হয়েছে। তাই এ বছর সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে সুপারির বাগান কৃষকদের কাছে ক্রয় করা হয়েছে। এমন দিনে স্থানীয় বাজারে গত বছর ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা সুপারির পোন বিক্রি হতো। বাহিরে সুপারির চাহিদা না থাকায় এ বছর এমন দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পোন সুপারি বিক্রি হচ্ছে। তাই দাম না বাড়লে এ বছর ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।       

দেশি সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় সুপারির বাজারে ধ্বস নেমেছে

বালারহাট বাজারের সুপারি আড়তদার শাহজালাল ও সামচুল হক জানান, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সিলেট, খুলনা, কচুয়াসহ কয়েকটি জেলার আলা মজা সুপারির ব্যাপক আমদানি ও রংপুর অঞ্চলে দেশি সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় সুপারির বাজারে ধ্বস নেমেছে। গত বছর এমন দিনে ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার ৪০০ টাকা সুপারীর কাওন ছিল। এখন আমরা বাজারে ২৪০০ থেকে ৩২০০ টাকা কাওন সুপারি কিনে বাড়ীতে মজার জন্য মাটিতে পুতে রাখছি। তারা আরও জানান, সরকার বিদেশ থেকে সুপারির রং আমদানি না করে দেশে সুপারির রং কারখানার ব্যবস্থা করলে সুপারি চাষিরা লাভবান হবে। তা না হলে সুপারি চাষিরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।  

এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, ফুলবাড়ীতে ১১০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সুপারির চাষ করেছেন। এ বছর আশানুরূপ সুপারির ফলনও ভাল হয়েছে। তবে কি কারণে এ বছর সুপারীর দাম না থাকার কারণটা আমার জানা নেই।

ইত্তেফাক/এআই