শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সমুদ্রপথে দক্ষিণ উপকূলে নামছে ইয়াবা, বাহক জেলেনৌকা

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ১১:২৮

আগে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রামকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ঐ রুটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। ফলে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোটগুলো সমুদ্রপথে সরাসরি বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও মহিপুর এলাকায় চলে আসে। এরা গভীর সমুদ্রে ইয়াবা হস্তান্তরের কাজ করে।

গমুদ্রপথে ইয়াবা চালানের চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদকের ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজ করছেন জেলেনৌকার মাঝিরা।

জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বরগুনার বামনা থেকে ৪৮ হাজার পিস ইয়াবার চালানসহ নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে র‍্যাব। এর পরদিন বিষখালী নদীর পাথরঘাটা এলাকার একটি ট্রলার থেকে ১ হাজার ৩ পিস ইয়াবাসহ রুস্তম নামের একজনকে আটক করে কোস্ট গার্ড। এক দিন পর রাতে ফের বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নে করুনা গ্রামের দোলন সিকদারের বাড়িতে অভিযানে রিপন হাওলাদার, আব্দুর রব ও জসিম নামের তিন জনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাদের কাছ থেকেও ১ হাজার ২৭৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তিন দিনের অভিযানে ইয়াবাসহ আটক পাঁচ ব্যক্তির দুজনই পেশায় জেলে। আটক নজরুল ট্রলারে জেলের কাজ করতেন। রুস্তমও পেশায় জেলে। জিজ্ঞাসাবাদে এসব ব্যক্তি জানান, ইয়াবা চালানের ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজ করেন আরো অনেক জেলে। ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর কলাপাড়ার শেখ কামাল সেতুর টোল পয়েন্ট থেকে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ পিস ইয়াবার বিশাল চালানসহ উখিয়ার আলমসহ তার সহযোগী টেকনাফের ইব্রাহিমকে বরিশালে আটক করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ঢাকায় বরগুনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সপ্তবর্ণা-১ লঞ্চ থেকে ৮ লাখ ৪৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন জনকে আটক করে র্যাব।

বরগুনার পাথরঘাটা মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় ট্রলার মালিক, জেলে ও মত্স্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝিদের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবা নৌপথে পাথরঘাটায় পৌঁছানোর কাজ করানো হয়। কক্সবাজার উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে গভীর সমুদ্রে জেলে ট্রলারে ইয়াবার এসব চালান তুলে দেওয়া হয়। পটুয়াখালী থেকে ৩০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বেও বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী এলাকার ট্রলারে জেলেরা ইয়াবা গ্রহণ করেন। বরগুনা জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ বলেন, ‘র্যাব জানিয়েছিল সমুদ্রপথে ইয়াবা চালানের চক্রে আট থেকে ১০ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। এ গডফাদারদের তালিকা র্যাবের কাছে আছে, কিন্তু এখনো ইয়াবা বহনকারীরাই বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে আটক হন। আর মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ র্যাব-৮ পটুয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শহিদুল ইসলাম জানান, ১৮ মার্চ বরগুনার বামনা উপজেলা থেকে জব্দ হওয়া ইয়াবার চালান কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে পাথরঘাটার বিষখালী মোহনায় আসে। একই দিন ভোর রাত ৪টার দিকে পাথরঘাটার বিষখালী নদী থেকে ইয়াবাসহ আটক জেলের কাছেও সমুদ্রপথে ইয়াবার চালান এসেছিল। তিনি জানান, সম্প্রতি আটক ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য মতে সমুদ্রপথে আসা ইয়াবার চালান গ্রহণ করে বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী, পটুয়াখালীর মহিপুর-আলীপুরের স্থানীয় কোনো গডফাদার। বিষয়টি একাধিক সংস্থা খতিয়ে দেখছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘এই রুট বন্ধে জেলা পুলিশের বিভিন্ন শাখা, কোস্ট গার্ড, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা যৌথবাহিনীর সদস্যরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমরা এই রুটে ইয়াবা চালান বন্ধে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি স্হানীয় গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’

ইত্তেফাক/ ইআ