শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যে কারণে জবিতে নিজস্ব ভর্তি-পদ্ধতি চান তারা

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১৮:০৭

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। অন্যান্য বছর নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা ও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতো বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন রকম। দশটি মেধাতালিকা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না পাওয়ায় ১৫০টি আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

দেশের শীর্ষ ৪ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না আসায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। 

জবির শিক্ষকরা বলছেন, নামমাত্র নম্বর পেয়ে শিক্ষার্থীদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বিগত বছরগুলোর সব অর্জনকে ম্লান করেছে। একইসঙ্গে মানসম্মত শিক্ষার্থী পেতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বের মান ফেরাতে এবার থেকে আবারও নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। 

সূত্র জানায়, দেশের সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম বিবিএ ও স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা লিখিত পদ্ধতিতে নেওয়া শুরু করে। ওই সময় থেকে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে প্রথম ধাপের প্রাথমিক আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট শর্ত অনুযায়ী প্রাথমিক আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায় ব্যাপকভাবে। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় লিখিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরপর দুই বছর জবি নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ব্যাপক সাড়া ফেললেও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সার্বিক ভোগান্তি হ্রাস ও সুবিধার্থে আয়োজনের কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে তার চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুরুতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানায় আয়োজক কমিটি। তবে, বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট শুরুতেই বাদ দেওয়া, হঠাৎ পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দেওয়া, কর্মদিবসে পরীক্ষার তারিখ ফেলায় তীব্র যানজট, নিজের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলে প্রচুর অসঙ্গতিতে  গুচ্ছ পদ্ধতিই তীব্র ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

এদিকে, দেশের শীর্ষস্থানীয় অন্য ৪ বিশ্ববিদ্যালয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না আসায় বাধে বিপত্তি। এক্ষেত্রে গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাতন্ত্র্য বিলীন হয়ে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নও তোলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শীর্ষ ৪ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না আসায়, গুচ্ছে আসা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানের দিক থেকে নিম্নমানের বলেও মনে করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, অতি অল্পসময়ে জবি যতটা এগিয়েছিল, গুচ্ছে যাওয়ায় অনেকটা পিছিয়েও গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসঙ্গতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বারবার গণ সাক্ষাৎকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। যারা নম্বর পেয়েছেন, তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে গত ১৮ মার্চ গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গুচ্ছে এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  থাকবে কি না? এমন অভিমতের জন্য সময় চেয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খুব কম সময়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পেরেছিল নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতির জন্য। কিন্তু গুচ্ছে নানান অসঙ্গতি ছিল। এর প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেকটা পিছিয়ে গেছে। এবার শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও এটি ফুটে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্যান্ডার্ড মানের শিক্ষক রয়েছেন কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে মান বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। তবে, জবি যদি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরে আসে, ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্যই ভালো হবে।’

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হ্রাসে আয়োজন করা হলেও সেটি হয়নি। এটিকে আরও সুন্দর করা যেতো। এর অসঙ্গতির ফল শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরা। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার অধিকার কারও নেই। ২০ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে আসবে আর বাকি ৪টি আসবে না, তা হবে না। সরকারের উচিত সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গুচ্ছের ব্যবস্থা করা। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’

ইত্তেফাক/এনই/এএএম