বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দূষিত পানি থেকেই ডায়রিয়া!

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:৩৩

রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব থামছে না। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে এখনো অব্যাহত আছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, বাসাবো, কদমতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকার মানুষ বেশি ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, উত্তরা ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেও রোগী আসছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায়ও ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আইসিডিডিআর,বির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৪ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৮৩ রোগী এসেছে। আর পহেলা মার্চ থেকে গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ হাজার ৭৩৭ জন রোগী আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি হয়। কিন্তু হাসপাতালে বেড আছে সাড়ে ৩০০। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের জন্য দূষিত পানিকে দায়ী করে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের চিকিত্সকরা বলেন, দূষিত পানির জন্যই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব থামছে না। যেসব রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে, তাদের প্রায় সবারই দেখা যাচ্ছে পানির সমস্যা। পানিতে গন্ধ। অনেক কারণে পানি দূষিত হয়। রোগীদের বেশির ভাগই বলেছে, তাদের পানি খেয়েই সমস্যা হয়েছে। অনেকে বলেছে, তারা ওয়াসার পানি ফুটিয়ে খায়নি। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিছু কিছু লোক ইফতারের সময় মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত বরফ দিয়ে শরবত বানিয়ে খেয়েছে এবং পরবর্তীকালে ডায়রিয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় এটা ঘটেছে।

এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী মাসে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। ঢাকা মহানগরের যেসব এলাকায় ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব রয়েছে, সেসব এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে এই টিকা দেওয়া হবে। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে পানি ফুটিয়ে খাওয়াসহ পচাবাসি খাবার পরিহারের পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, নিম্নমানের পচাবাসি খাবার পরিহার করতে হবে। খোলা আকাশের নিচের খাবার খাওয়া যাবে না। নিয়মিত হাত ধুতে হবে। পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। তারা বলেন, এখন কোভিড কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা দিয়েছে। এটিও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের আরেকটি কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ডায়রিয়ার চিকিত্সা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব হাসপাতালেই আছে। স্যালাইন দেওয়া ও খাবার স্যালাইন খেলেই এটা ভালো হয়ে যায়। আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সাইন্টিস্ট ও হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, এ বছর অস্বাভাবিক হারে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।

বুধবার রাজধানীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বিষয়ক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুরকে ডায়রিয়ার হট স্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এসব এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এক বছর বয়স থেকে বড় সব বয়সের মানুষ কলেরার টিকা পাবেন। শুধু গর্ভবতী নারীরা পাবেন না। মে মাসে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে এবং জুন মাসে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ। আগামী মাসে এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা হবে।

সারা দেশে কেন টিকা দেওয়া হবে না—এমন প্রশ্নে অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘টিকার এখন খুব সংকট। নাইজেরিয়া থেকে টিকা কেটে আমাদের দেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী যাত্রাবাড়ী এলাকায়।’ যাত্রাবাড়ীতে এত বেশি কেন—এ প্রশ্নে অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘নিরাপদ পানির অভাবে। পানির সমস্যা সমাধান না হলে এটা থেকেই যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রত্যেকটি হাসপাতালে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছি। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সতর্কতামূলক অনুষ্ঠান করা হয়েছে।’

চলতি বছর ডায়রিয়ায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। তবে এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত চারটি মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। আইসিডিডিআর,বি আমাদের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য হস্তান্তর করেনি। করলে আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখব।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর প্রমুখ।

ইত্তেফাক/ ইআ