দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ফি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আশ্বাস এবং কয়েকবার নোটিশ দিলেও এখনো সমস্যার সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বশেমুরবিপ্রবিতে কত নোটিশ, আশ্বাস এলো-গেলো অথচ বিষয়টি এখনও কার্যকর হয়নি।
বেতন কমানোর বিষয়টি কার্যকর না হওয়ায় প্রায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফি প্রদান বন্ধ রয়েছে। এতে দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেড়েই চলেছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি কমানো ও বাতিলের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেই নোটিশের বাস্তবায়ন না হলে ৩ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা ফি কমানোসহ ১৭ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। পরবর্তীতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে ৩১ অক্টোবর ফি কমানোর বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ফিসসমূহ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফিস প্রদান ব্যতিরেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করা হলো।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ফি প্রদান ছাড়াই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পড়াশোনা শেষে সার্টিফিকেট নিতে গেলেই গুনতে হচ্ছে পূর্ব নির্ধারিত অতিরিক্ত বেতন ও ফি। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসে ফি নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ হয়নি। এ কারণে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ফি গ্রহণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ফি কমানো হলে এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ফি নেওয়া বন্ধ থাকলেও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষে ভর্তিতে পূর্ব নির্ধারিত ফি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্য জানান, আমরা ফি কমানোর যে নোটিশটি দিয়েছিলাম সেটি শুধুমাত্র রানিং শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রথম বর্ষে যারা ভর্তি হবেন, তাদের জন্য না। প্রথম বর্ষে ভর্তির ফি এবং পরবর্তী দ্বিতীয় থেকে অষ্টম সেমিস্টার পর্যন্ত ফি-এর পরিমাণ ভিন্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল-রাজু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাবি করে আসছি অতিরিক্ত বেতন কমানো এবং অন্যায্য ফি বাতিলের। কয়েকবার নোটিশ জারি ও আশ্বাস দেওয়া হলেও কখনো সমাধান মেলেনি। এতে শিক্ষার্থীদের ওপরে চাপ তৈরি হচ্ছে। আমরা অতিদ্রুত এ বিষয়ে সমাধান চাই।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শামস জেবিন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত ফি গ্রহণ করা হতো। সর্বশেষ গত অক্টোবরে শিক্ষার্থীরা ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তখন উপাচার্য মুক্ত আলোচনায় আশ্বাস দেন ফি কমানো হবে। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে গেলেও সেটির এখনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু জাহিদ বলেন, আমাদের শিক্ষাবর্ষের প্রায় ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন কোনো ফি প্রদান ছাড়াই। ফলে মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে ফি কমিয়ে অল্প অল্প করে টাকা না নিলে বকেয়া পরিশোধ সম্ভব না।
এ সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে এবং পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতনের বিষয়টি সমাধান হয়নি। ঈদের পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা যাবে বলে মনে করছি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যে বেতন বকেয়া থাকবে তা অল্প অল্প করে নেওয়া হবে যাতে সবাই চাপ ছাড়া পরিশোধ করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বেতন ও ফির বিষয়ে যে দাবি জানিয়েছেন তাতে প্রতি সেমিস্টারের বেতন ১২০০ টাকার বদলে ৬০০ টাকা, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ২০০ টাকার বদলে ২০ টাকা, ছাত্র কল্যাণ ১৫০ টাকার বদলে ৫০ টাকা, আইডি কার্ড ৪০০ এর বদলে ৫০, চিকিৎসা ফি ২০০ এর বদলে ৫০, পরিবহন ফি ৬০০ এর বদলে ৩০০, রোভার স্কাউটস ও বিএনসিসি ১০০ এর বদলে ৪০, সিলেবাস ১৫০ টাকার বদলে ৫০ টাকা করার কথা বলেছেন। আর কম্পিউটার ও ইন্টারনেট, স্টুডেন্ট গাইডেন্স অ্যান্ড কাউন্সিলিং, বিভাগ উন্নয়ন, কেন্দ্র ফিসহ সব অমূলক ফি বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতি ক্রেডিট ফি ৫০, প্রবেশপত্র ফি ৫ টাকাসহ হলের সিট ভাড়া ৭৫ এবং সংস্থাপন ফি ৭৫ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।