শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

 দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে লক্ষ্মীপুরের খাল ও নদী, সেচ কার্যক্রম ব্যাহত

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৯:১৪

দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ নদী-নালা-খাল। রায়পুর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা নদী ডাকাতিয়া, জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রহমতখালী খাল ও রামগঞ্জ উপজেলার বীরেন্দ্র খাল দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া পানি প্রবাহের জন্য বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত নালাগুলোও দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা।

চন্দ্রগঞ্জ থেকে জেলা শহর পর্যন্ত রহমতখালী খালের বিভিন্ন পয়েন্টে খালের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। এতে দিন দিন সংকুচিত হয়ে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী খাল এখন তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এছাড়া বাজারকেন্দ্রিক ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। ডাকাতিয়া নদী প্রবহমান থাকলেও কাগজে-কলমে দেখানো হয়েছে ‘বদ্ধ জলমহাল’ হিসেবে। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে দখলদাররা রামগঞ্জের বীরেন্দ্র খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ করে ব্যবসা ও বসবাস করে আসছেন। ফলে বীরেন্দ্র খালটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে সেচ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন বাজার এবং পৌর এলাকার ঝুমুর সিনেমা হল সংলগ্ন, মাদাম, বাজার ব্রিজ সংলগ্ন খালের দুপাড়ে, গোশত হাটা সংলগ্ন মসজিদের পাশে রহমতখালীর পাড়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ইমারত বা দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ কয়েকটি স্থানে পুরোনো স্থাপনার পাশাপাশি নতুন করেও স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। ঝুমুর সিনেমা হলসংলগ্ন ময়দার মিলের পেছনের বিস্তীর্ণ অংশ ও বাজার ব্রিজের পূর্ব পাশে হায়দার শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে খালের দুই পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। 

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বদ্ধ হয়ে রয়েছে খাল ও ড্রেন। এতে স্বাভাবিক পানি চলাচল বন্ধসহ বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় পৌরবাসীন্দাদের। সমস্যা সমাধানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ স্থানেই সরকারি খালে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে দখলদারদের নোটিশ করা হবে। অন্যথায় জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ বলেন, নদী কোনোভাবেই ইজারা দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি জানতে পেরে ডাকাতিয়া নদী ইজারার দরপত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, সদর উপজেলার রহমতখালী খাল ও রামগঞ্জের বীরেন্দ্র খালের শুধু বাজার অংশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং আমাদের সার্ভেয়ার কর্তৃক যৌথভাবে জরিপ ও তদন্তের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করেছে। জেলা-উপজেলা প্রশাসন এবং পৌর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। খালের যেসব স্থানে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়নি, সেগুলো সরেজমিনে দেখে তালিকা করা হবে। 

ইত্তেফাক/ইআ