বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জমজমাট নরসিংদীর বাবুরহাটের কাপড়ের বাজার  

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৬:৫৫

পবিত্র রমজানের শুরু থেকেই পুরোদমে জমে উঠেছে নরসিংদীর বাবুরহাট। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাপড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে ছুটে আসছেন শেখেচর বাবুরহাটে। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে এখানকার ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানে নিত্য নতুন ডিজাইনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এই ঈদে কাঙ্ক্ষিত কেনাকাটা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।  

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঈদকে ঘিরে দেশের নানা প্রান্তের পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট। ঈদের বাজারে বেচাকেনার আশায় বিভিন্ন জেলার খুচরা বিক্রেতারা কিনতে আসছেন শাড়ী, লুঙ্গি, থ্রি-পিস,শার্ট পিস,প্যান্ট পিস,পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়সহ দেশীয় তৈরি প্রায় সব ধরনের কাপড়। ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কাপড়ে আনা হয়েছে নিত্যনতুন ডিজাইন।

সপ্তাহের শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, ফেনি, বরিশাল, পিরোজপুর, জামালপুর, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ দেশের প্রায় সব জেলার পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে বাজারটি। বাজারের প্রতিটি অলিগলিতে হাটের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে পাইকারি কাপড় বিক্রি। কেনা শেষ হলে শ্রমিকরা কাপড়ের গাইট বেধে তুলে দিচ্ছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাখা ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহনে। প্রতিদিন এখান থেকে পাঁচ শতাধিক ট্রাক বোঝাই কাপড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে। অনেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন কেনা কাপড়।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়াসহ একই সঙ্গে সবধরনের দেশীয় কাপড়ের বিপুল সমাহার থাকায় এই বাজার থেকে কাপড় কিনতে আসেন ক্রেতারা। ঈদের আগে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক তৈরি করে নিতে গজ কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয় আগেভাগেই। অনেকে পাইকারি দামে কিনতে আসছেন যাকাতের কাপড়ও। তবে এই বছর সবধরনের কাপড়ের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। অব্যাহতভাবে সুতার দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবার ফলে এই বছর কাপড়ের দাম বেশি বলে জানান পাইকারি বিক্রেতারা।

খুচরা বাজারে ঈদের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হলে এই পাইকারি কাপড়ের বাজারে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। করোনা পরিস্থিতির পর বেচাকেনা ভাল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। 

সিলেট থেকে আসা কাপড় ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন মুন্সি বলেন, পাইকারি দামে কাপড় কিনতে সবসময়ই এই হাটে আসতে হয়। ঈদকে ঘিরে খুচরা বাজারে বেচাকেনা শুরু না হলেও কাপড় সংগ্রহ করতে হচ্ছে আগেই। খুচরা বাজারে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হলে এই হাটের বেচাকেনা আরও বাড়বে।
শেখেরচর বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, শেখেরচর বাবুরহাটে দেশীয় কাপড়ের পাইকারি দোকানের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। দেশীয় কাপড়ের প্রায় ৮০ ভাগ চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে এ কাপড়ের বাজার থেকে। তিনি আরো জানান, গত বছর করোনার কারণে এখানকার কাপড় ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর তা পুষিয়ে নিতে আশার আলো দেখছেন এ বাজারের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ীরা।

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এ বছর সন্তোষজনক বেচাকেনায় লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। ঈদের বেচাকেনাকে ঘিরে ৪৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এই হাটে। 

বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত টানা চারদিন চলে এই হাটের বেচাকেনা। সাধারণত এই হাটে প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়ে থাকে। এবছর তা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

 

ইত্তেফাক/এআই