শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪২টি ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১৫:০০

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং রড কম দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করতে এসে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়ে ১৪২টি ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।  

জানা গেছে, আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দুই শতক ভূমিতে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ১৩৮টি ঘর উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ঘরগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে নির্মাণকাজ পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম। দুপুর পর্যন্ত তিনি ঘুরে ঘুরে কাজ দেখেন। সে সময় কাজের সঠিকতা যাচাই করতে গ্রেড ভিম, পিলার, লিন্টারের কিছু অংশ ভেঙে ভেঙে দেখতে পান সঠিক মাপের রড দেওয়া হয়নি, রড কম দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে রডের রিং না দিয়ে অতিরিক্ত দূরে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইট, বালি, সিমেন্টেও বেশকিছু ত্রুটি দেখতে পান। এসব কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাতটি স্থানের ১৪২টি ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, ঠিকাদার নূরুজ্জামান ভূঁইয়া, মো. আক্তার মাস্টার এবং মো. লিটনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অন্য কোন সরকারি কর্মকর্তা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার, নির্মাণকাজ তদরকি করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাপস চক্রবর্তী ও উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম। প্রকল্পে মৌখিকভাবে ১৬৯টি ঘরের নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূঁইয়া। এর মধ্যে রাজাপুর ৩২, চানপুর-১এ ৪৩, চানপুর-২এ ১৩, চানপুর-৩এ ৯, সাতপাড়ায় ২০, খলাপাড়ায় ২৩, ঘাগুটিয়ায় ৮, নিলাখাদে বা কর্মমঠে ১০টি ঘরের নির্মাণকাজ চলমান। একইভাবে ঘাগুটিয়া, সাতপাড়া ও কর্মমঠ এলাকার ঘর নির্মাণের দায়িত্ব পান ঠিকাদার আক্তার হোসেন। কিন্তু চানপুর-২ ও চানপুর-৩ ছাড়া অন্যসব নির্মাণকাজে এসব অনিয়ম দেখতে পান জেলা প্রশাসক। নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিনসহ তদন্ত কমিটির তিন সদস্য, আখাউড়ার ইউএনও, এসিল্যান্ড, পিআইও, উপজেলা প্রকৌশলীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিটি ঘর থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সম্প্রতি তাদের ঈদ কেনাকাটার জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম বিষয়ে ঠিকাদার মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসব কাজ করছেন। আমি শুধু নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, পাঁচ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আমি। সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী। তিনিই কাজের মনিটরিং করছেন। অনিয়মের বিষয়ে আমাকে কখনো কোন তথ্য দেননি। তিনি বলেন, দুই ঠিকাদার পরিচিত। বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের কাজ দেওয়া হয়েছিল। ঢালাইয়ের সময় আমরা উপস্হিত থাকতে পারিনি। জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম বলেন, রড কম দেওয়াসহ বড় ধরনের অনিয়মের কারণে ১৪২টি ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছে। এ অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও, এসিল্যান্ড, পিআইও, উপজেলা প্রকৌশলীর কেউই এসব কাজের তদারকি করেননি, পরিদর্শনে যাননি, ঢালাইয়ের সময়ও যাননি। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/ ইআ