বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বরিস জনসনের দলের জনপ্রিয়তায় ধস

আপডেট : ০৯ মে ২০২২, ০৪:১১

করোনাকালে লকডাউনের আইন ভেঙে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বিভিন্ন সময় মদের পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি একা নন তার সঙ্গে ছিলেন অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কিছু কর্মকর্তাও। করোনা মহামারির সময় যখন ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর পার্টি করার খবর সামনে আসতেই দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়।

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের জোর দাবি ওঠে। শুধু বিরোধীদল বা সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে নয়, খোদ বরিসের কনজারভেটিভ পার্টির বেশ কয়েক জন আইনপ্রণেতা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্টিতে অংশ নেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানান। লকডাউন আইন ভেঙে পার্টিতে অংশ নেওয়ার কারণে সম্প্রতি ঐ সব বরিস জনসনকে জরিমানা করেছে লন্ডন পুলিশ। ব্রিটেনের ইতিহাসে কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে আইন ভাঙার জন্য শাস্তি দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।

তারপরও বরিস জনসন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার মতো কোনো কাজ তিনি করেননি। কিন্তু ব্রিটিশ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাবের সঙ্গে একমত নন!

যুক্তরাজ্যে সদ্যঅনুষ্ঠিত স্হানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টি আশানুরূপ ফল পায়নি। ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের স্হানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে ৪০০-এর বেশি আসন হারিয়েছে তারা। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে বিরোধী লেবার পার্টি। লন্ডনের কনজারভেটিভ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কিছু এলাকাও বরিসের দলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ও ওয়ান্ডসওয়ার্থে হেরেছে কনজারভেটিভ পার্টি।

দীর্ঘ ৪৪ বছর পর কনজারভেটিভদের দুর্গ বলে খ্যাত ওয়ান্ডসওয়ার্থে হেরেছে দলটি। দুটি কাউন্সিলই দখল করেছে লেবার পার্টি। অন্যদিকে ওকিং এবং সমারসেট কনজারভেটিভদের কাছ থেকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের দখলে গেছে। স্কটল্যান্ডে তৃতীয় অবস্হানে নেমেছে বরিসের দল। ওয়েলসে কনজারভেটিভদের দখলে থাকা একমাত্র মনমাউথশায়ার কাউন্সিলেও হেরেছে তারা।

কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকেই দায়ী করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। কারণ পার্টি-কেলেঙ্কারির নিয়ে দেশ জুড়ে উত্তেজনার মধ্যেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসের মূল্যবৃদ্ধিও সাধারণ মানুষকে সরকারি দলের প্রতি আরো বিরূপ মনোভাবাপন্ন করে তুলেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এবারের স্হানীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভরা ভালো করবে না এমন ধারণা সবার ছিল। ফল দেখে মনে হচ্ছে, ভোটাররা প্রধানমন্ত্রীকে তার কর্মের জন্য শাস্তি দিয়েছেন। এই পরাজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর আরো চাপ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে কনজারভেটিভ পার্টি। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন বরিস জনসন। কিন্তু তার সরকার মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো গুরুতর সংকট মোকাবিলায় জোর না দিয়ে নানা কেলেঙ্কারিতে ডুবে আছে। এ অবস্হায় ২০২৪ সালের নির্বাচনে বরিস জনসন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান থেকে নির্বাচনে লড়বেন এমনটা আশা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর আশা ছিল, এ সুযোগে স্হানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে ভালো ফল করবে তারা। এখন অনেকটাই চাঙ্গা বিরোধীদল লেবার পার্টি। বিরোধী নেতা কেইর স্টারমার নির্বাচনের ফলকে তার দলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে হারের খাদের কিনারা থেকে উঠে আসার জন্য এটি আমাদের জন্য বড় একটি টার্নিং পয়েন্ট।

ইত্তেফাক/টিআর