গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ নিয়ে আলোচনা চলছে। ঝড়, বৃষ্টিপাত, তাপদাহ, আবার কখনো বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস—সবকিছুই প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রকৃতি নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতেই কখনো কখনো বিরূপ আচরণ করে। সেই বিরূপ আচরণেরই এক নাম ঘূর্ণিঝড়। বজ্রপাত ও বৃষ্টির সাথে বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণনের ফলে উত্পত্তি হয় বলে একে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেও বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, লোকালয়ে পৌঁছায় না সবগুলো। তবে যেগুলো ঝড়গুলো উপকূল বা স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাস বলছে, সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশে, আর নিয়মিত বিরতিতে প্রতিবার একেকটি দুর্যোগ কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ। একইভাবে সমুদ্রতীরবর্তী বহু দেশই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় অধিক পরিচিত ‘সাইক্লোন’ নামে। এই ইংরেজি নামটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘কাইক্লোস’ থেকে, যেটির অর্থ কুণ্ডলী পাকানো সাপ। উপগ্রহে ঘূর্ণিঝড়ের চিত্র দেখতে অনেকটা কুণ্ডলী পাকানো সাপের মতোই, তাই এই নামটি দেওয়ার কারণ স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, চীনে টাইফুন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সাইক্লোন। তবে সাধারণত প্রচলিত বাংলায় অনেকেই ঘূর্ণিঝড় বা বড় ঝড়কে ‘তুফান’ বলেন, যেটি এসেছে ‘টাইফুন’ থেকে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে হলে আগাম পূর্বাভাস ও পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সবসময় দুর্যোগকে পুরোপুরি মোকাবেলা সম্ভব হয় না। আর এটি প্রায়ই তার গতিপথ পরিবর্তন করে বলে যেকোনো সময় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এক সময় প্রযুক্তিও এখনকার মতো আধুনিক ছিল না। পৃথিবীর ইতিহাসে বড় ঘূর্ণিঝড়গুলোর কারণে প্রচুর মানুষ মারা গেছে। ধ্বসে পড়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা নতুন নয়। এখনো বহু মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ে সব হারিয়ে গৃহহীন, সহায়-সম্বলহীন হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। আর ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোথাও এত মানুষ মারা যায়নি।
দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৮৭৬)
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল। ভয়াবহ সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ। বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার, আর সমুদ্রের পানি বয়ে যাচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ ফুট ওপর দিয়ে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। পরে অনাহার ও দুর্ভিক্ষে মারা যায় অসংখ্য মানুষ।
হাইফোং টাইফুন, ভিয়েতনাম (১৮৮১)
ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে টাইফুন আঘাত হানে। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করেছে। সেবার ভিয়েতনামে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৯৭০)
বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন। সেই ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত ৫ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে ১ লাখই ছিল জেলে। বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যায়।
নিনা টাইফুন, চীন (১৯৭৫)
চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। তবে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন হয় না, ফলে সেদেশে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ১৯৭৫ সালে দেশটির হেনান প্রদেশে আঘাত হেনেছিল টাইফুন নিনা, যেটির ভয়াবহতায় প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ।
আটাশির ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৮৮)
১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হিসেবে পরিচিত। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারায়। ঝড়ে সেবার প্রায় ৭০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে যায়, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টন।
ম্যারিয়েন ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৯১)
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়। এটির ফলে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। প্রাণ হারায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। বাস্তুহারা হয়ে পড়ে ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিডর, বাংলাদেশ (২০০৭)
একযুগ আগের সিডরের কথা এখনো ভুলতে পারেনি মানুষ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ২৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় সিডর। শ্রীলঙ্কান শব্দ সিডরের অর্থ চোখ, ঘূর্ণিঝড়টি চোখের আকৃতির হওয়ায় এটিকে সিডর নাম দেওয়া হয়েছিল। ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার এই ঝড়ে ২ হাজার ২১৭ জন প্রাণ হারায়। তীব্র পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৭০ হাজার ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয় ৩৭ হাজার একর জমির ফসল।
নার্গিস, মিয়ানমার (২০০৮)
সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস। ২০০৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আঘাত হানে নার্গিস। এর তাণ্ডবে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সাড়ে ৪ লাখ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
আইলা, বাংলাদেশ ও ভারত (২০০৯)
২০০৯ সালে ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। ঝড়টির ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েক লক্ষ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় ও ২ লক্ষ গবাদিপশু প্রাণ হারায়।
হ্যারিকেন ইরমা, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৭)
২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার ঝড় ছিল হ্যারিকেন ইরমা। ৩০০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের এই ঝড়ে নিহত হয় ২৮ জন। বারমুডা পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ৪ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বন্যায় প্লাবিত হয় ফ্লোরিডার বিশাল এলাকা।
হ্যারিকেন মাইকেল, যুক্তরাষ্ট্র (২০১৮)
ইরমার প্রায় ১ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে ১০ অক্টোবর আছড়ে পড়ে হ্যারিকেন মাইকেল। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ১শ’ বছরের মধ্যে এটিই সেখানকার সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়। ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাসে ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট হ্যারিকেনটির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ফ্লোরিডা। গাছপালা-বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে, তছনছ হয় অনেক বসতবাড়ি।
টাইফুন জেবি, জাপান (২০১৮)
জাপানের উপকূলে আঘাত হানা টাইফুন জেবিকে সেদেশের ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ঝড়ে প্রাণ হারান ১০ জন। এছাড়াও অন্তত ৩০০ জন আহত হন। ঝড়ের আঘাতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দেখা দেয় বন্যা ও ভূমিধস।
টাইফুন মাংখুট, হংকং (২০১৮)
টাইফুন মাংখুট আঘাত হানে চীনের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গুয়াংডংয়ে। এর আগে তাণ্ডব চালায় ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঘটে যাওয়া এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। মাংখুটের আঘাতে ফিলিপাইনে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জন। বেশিরভাগই মারা যায় ভূমিধসে।
এই উপমহাদেশের আরও কিছু ঘূর্ণিঝড়
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় 'জাওয়াদ'। একই বছরের মে মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ছিল ইয়াস বা 'যশ'।
এর আগে ২০২০ সালের ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগে গভীর নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়ে তা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়। এর নাম দেওয়া হয় 'আম্ফান'। তবে স্থলভাগে তা ধীরে ধীরে শক্তি হারায়। এটির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয়।
২০১৯ সালের নভেম্বরে উত্তর আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের বুলবুলের উৎপত্তি ঘটে। ৫ নভেম্বর প্রথমে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, যা পরদিন গভীর নিম্নচাপ এবং ৭ নভেম্বর দুপুরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
২০১৮ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড় তিতলি। ৬ থেকে ৯ অক্টোবর ভারতের কলকাতা থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এটি জন্ম নেয়, ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে আঘাত হানে ১১ অক্টোবর। এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হেনেছিল, যার গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার।
২০১৭ সালের মে মাসের শেষদিকে 'মোরা' নামের একটি ঘূর্ণিঝড় উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় তৈরি হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সেবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর সংকেত দেখাতে বলে। ৩০ মে ২০১৭ মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩৫ কিমি বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি।
২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানে। এর গতিবেগ ছিল ১২৮ কিলোমিটার। ২০১৩ সালের ১৬ মে আসে মহাসেন, যার গতি ছিল ১০০ কিলোমিটার। আর ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই আসে কামেন। এর গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। প্রতিবারই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু এলাকা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়কে নানা নামে নামকরণের কারণ
এলাকা ভেদে দুর্যোগের ধরন বোঝাতে ঘূর্ণিঝড়কে হ্যারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোনের মতো ভিন্ন নামে ডাকা হলেও এরা প্রতিবারই নতুন নতুন নামে হাজির হয়। এক সময় ঝড়ের নামকরণ করা হতো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। তবে তা সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। তাই বলতে বা জানতে সহজ হবে, আবহাওয়া স্টেশন থেকে ঝড়ের তথ্য সবাইকে জানাতে ও বিপদসংকেত দিয়ে সতর্ক করতে সুবিধা হবে—এমনটা বিবেচনা করেই সহজ নাম দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি পূর্বাভাস অনুযায়ী পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম নির্ধারণ করে। বিভিন্ন দেশ নাম প্রস্তাব করে। সেই তালিকা থেকে চূড়ান্ত করা হয় একেকটি নাম। যেমন শ্রীলঙ্কান শব্দ সিডরের কথা আগেই বলা হয়েছে। কয়েকবছর আগে ঘটে যাওয়া ফণী’র নামকরণ করেছে বাংলাদেশ, যেটির অর্থ হিসেবে বোঝানো হয়েছে সাপের ফণা। সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ফণা তুলে আক্রমণ করার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে ‘ফণী’ নামটি দিয়ে। তবে আক্ষরিক অর্থে এটি কেবল একটি নাম। আর ঘূর্ণিঝড়গুলোকে যে নাম দেওয়া হয় সেটি কখনো পুনরাবৃত্তি করা হয় না।
তবে মজার বিষয় হলো, অনেক ঘূর্ণিঝড়ের নামই নারীর নামে। যেমন নার্গিস, তিতলি, রেশমী, ক্যাটরিনা ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিদরা গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে এমনটা শুরু করেন। ভাবখানা এমন যে, তাণ্ডবলীলার দায় শুধু নারীদের! এ নিয়ে নারীবাদীরা প্রতিবাদ শুরু করলে পরিস্থিতি সামলাতে বর্ণমালার ক্রমিক অনুযায়ী পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম দেওয়া হয়। পরবর্তীতে পুরুষের নামেও নামকরণ করা হয়। যেমন মহাসেন। এছাড়া বিভিন্ন বস্তুর নামেও নাম দেওয়া হয়। যেমন সিডর, মেঘ, ফণী ইত্যাদি। ২০১৯ সালে ভারতের পশ্চিমে আরব সাগরে সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় 'বায়ু'।