ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা বৃষ্টিতে ক্ষেতের পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় দিন পার করছেন কৃষকেরা।
কৃষকরা জানান, একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন এবং দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই।
ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে চাষিরা চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন । এ ছাড়া, শ্রমিক সংকটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
এ উপজেলায় ঈদের ২-৩ দিন আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এসময় পুরোদমে ধান কাটার মৌসুম শুরু হলেও এখনও অধিকাংশ কৃষক ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারেননি। আর ২/১ সপ্তাহ সময় পেলে পাকা ধানগুলো কেটে ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকরা।
এদিকে সপ্তাহ পার না হতেই ফের গতকাল সোমবার (৯ মে) ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে কেটে রাখা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এতে ধানের সঙ্গে ডুবছে কৃষকের স্বপ্নও।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর। কিন্তু কার্তিক মাসের কিছু ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ধান বাড়িতে এনে ‘পালা দিয়ে’ রেখেছেন কৃষকরা, আরগুলো ক্ষেতেই পড়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গতকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে জমে থাকা পানি কেটে রাখা ধানের উপরে ওঠে গেছে।
এবিষয়ে উপজেলার জামাল ইউনিয়নের উল্ল্যা গ্রামের কৃষক তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘এবছর আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে পাকা ধান।’ একই এলাকার আরও অনেক কৃষক জানান, তাদের কিছু পরিমাণ ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন, বাকি ধান পানিতে ভাসছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার বলেন, ‘উপজেলায় এবছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশিই হয়েছে। তেমনি ফলনও ভালো হয়েছিল। গতকাল সোমবার থেকে ঘূর্ণিঝড় আসানির বৃষ্টির কারণে যেসমস্ত বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে, সেসমস্ত ক্ষেতের আইল কেটে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব ক্ষেতে ধান নুয়ে পড়েছে, সেসব ক্ষেতের ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। মাঠে গিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন হস্তান্তর করছি। এতে কৃষকদের ফসল ভালোভাবেই সংগ্রহ হবে।’