বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কারিগরি প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া তালিকা, অর্থ আত্মসাৎ

আপডেট : ১২ মে ২০২২, ০১:০৮

সিংগাইরে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ অফিসে টাকা ছাড়া মিলছে না কোনো সেবা। সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ নিতে টাকা ছাড়া ভর্তি হওয়া যায় না। প্রতি ব্যাচে ২৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিধান থাকলেও ১৫ জনকে দিয়েই হাজিরা খাতায় ২৫ জনের নাম দেখানো হয়। তাদের সম্মানি ভাতার চেক এলে গোপন করা হয়। 

এছাড়াও, পারলারের ক্ষেত্রে সরকারি পণ্য দিয়ে কাজ শেখানোর কথা থাকলেও টাকা দিয়েই তা কিনতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাধ্যতামূলক শিক্ষার্থীদের কাছে উপহারসামগ্রী আদায় এবং ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্পের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। টাকা না দিলে ভাতার চেক দেওয়া হয় না বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাইরে না বলার জন্যও চাপ দেওয়া হয়। এভাবেই হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। প্রশিক্ষণার্থীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে উভয় পক্ষের জবানবন্দি নেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে ভর্ত্সনা করেন এবং পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অফিসের কর্মকর্তাকে তার অধীনস্থদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। সঠিক রিপোর্ট না দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন।

এ সময় প্রশিক্ষণার্থী শারমিন আক্তার নামে এক প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করেন, টাকা ছাড়া কোনো কাজ শেখানো হয় না। চেক নেওয়ার সময়ে টাকা না দিলে দুর্ব্যবহার করা হয়। ব্লক বাটিক ও বিউটি পারলার ট্রেনিং করতে যারা আবেদন করেন তাদের মধ্যে অনেকের নামই বাদ দেওয়া হয়। আবার নাম এন্ট্রি করলেও তাদের জানানো হয় না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ব্যাচে ২৫ জন ভর্তি দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫ জনের বেশি দেখা যায় না। এভাবে তিন মাস কোর্সের প্রতি জনের নামে আসা ১২ হাজার টাকার ভাতা আত্মসাৎ করা হয়।

তানিয়া আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, প্রশিক্ষণ শেষে অনুষ্ঠানের কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৪০০ এবং অনলাইনের আবেদনের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। অনিতা রানী সূত্রধর নামে একজন জানান, ‘আমার নামে চেক হয়েছে অফিসের মাধ্যমেই জানতে পারি। চেক আনতে গেলে দুর্ব্যবহার করা হয়। চ্যালেঞ্জ করার পর ঠিকই চেক দেয়।’ এছাড়া তাদের ব্যাচে ইসমত আক্তার, সিনথিয়া ও হালিমা নামে কেউ নেই। অথচ এসব ভুয়া নাম দিয়ে তালিকা তৈরি করে চেক তৈরি করা হয়েছে। ঝর্না আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ১২ হাজার নয়, তাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে।

মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রওশন আরা তার অফিসে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন। কোনো টাকা ফেরত যায়নি বলে জানান তিনি। তবে নেতাদের চাপে অনেক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের নামে ভর্তি করা হলেও তারা ক্লাস না করেই চেক নিয়ে যান বলে তিনি স্বীকার করেন। এদিকে অফিস সহকারী রাসেদা খাতুনের ভিন্ন বক্তব্য। তিনি বলেন, তাদের অফিসে ২০ ভাগ অনিয়ম থাকতে পারে। তারা দুই জনই এ ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরি না করার জন্য অনুরোধ জানান।

ইত্তেফাক/ ইআ