তারা মিয়া। রিকশা চালান। একবেলা খান, আরেক বেলার জন্য বেরিয়ে পড়েন জীবিকার সন্ধানে। কোনো সঞ্চিত টাকা নেই। কিন্তু অনেক বড় একটি মানবিক মন আছে। আশেপাশে যেখানেই অসহায় মানুষ দেখেন, নিজের মুখের খাবার তুলে দেন তাদের মুখে।
ছোটবেলায় এই টাকার জন্যই পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। তাই তিন চাকার রিকশাই তার জীবনের চাকা ঘুরানোর একমাত্র অবলম্বন। শুধু তার নিজের জীবন নিয়েই ভাবেন না, এলাকার সব গরীব-দুঃখীই তার কাছে পরমাত্মীয়। পথে পথে ঘোরেন আর অসহায়দের খুঁজে বের করে উপার্জিত অর্থ তাদের দান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনার দুর্গাপুরে মানবতার ফেরীওয়ালা নামে খ্যাত তারা মিয়া স্থানীয় পত্রিকার হকার সুজিত সাহা ও তার ছেলে নিরব সাহাকে একটি করে দুটি বাইসাইকেল প্রদান করেন।
রোববার (১৫ মে) দুর্গাপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সাংবাদিক ও স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাদের হাতে সাইকেলের চাবি তুলে দেন তারা মিয়া।
হকার সুজিত সাহা দীর্ঘ ২০ বছর যাবত একটি পুরাতন সাইকেল দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন সকালে সেই ভাঙ্গা সাইকেল দিয়ে তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পডুয়া ছেলে নিরব সাহাকে নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তারপর পত্রিকা বিক্রির কাজে বের হতেন। সুজিত সাহার সেই কষ্টের দৃশ্য তারা মিয়ার চোখে পড়ে এবং তিনি সুজিত সাহাকে আশ্বাস দেন দুই মাসের মধ্যে তার কষ্ট লাঘব করবেন।
আজ সাইকেলের চাবি পেয়ে হকার সুজিত সাহা বলেন, ‘ঈশ্বরের কাছে আমি তারা মিয়ার মঙ্গল কামনা করি। তিনি নিজে গরীব হয়ে যেভাবে গরীব-অসহায় ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এভাবে সমাজের প্রতিটি মানুষ যাতে মানুষের পাশে দাঁড়ান।’
স্থানীয়রা জানান, রিকশাচালক তারা মিয়া দীর্ঘ সাত বছর ধরে প্রতিদিন কিছু কিছু টাকা জমিয়ে মাস শেষে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়সহ গ্রামের সাধারণ অবহেলিত শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, পেনসিলসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ কিনে দেন।
তারা আরও জানান, ছোটবেলায় টাকার অভাবে তারা মিয়া পড়াশোনা করতে পারেননি, তাই তিনি গরীবের কষ্ট বোঝেন। প্রতিমাসেই দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এভাবে সহযোগিতা করেন তিনি। মাঝে মাঝে গরীব-অসহায় মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন।
তারা মিয়া বলেন, ‘আমি টাকার অভাবে পড়তে পারিনি তাতে কি, এলাকার গরীব শিক্ষার্থীরা যেন টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ না করে দেন, এজন্য তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। এলাকার ধনীরা যদি এভাবে সবার পাশে দাঁড়ান, আমাদের সমাজে কেউ কষ্ট করবো না। সারাজীবন মানুষের পাশে থাকেতে চাই।’