শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ লেনদেন

আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ০২:২১

চলতি বছরের মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। এ মাসে লেনদেন হয়েছে ৭৭ হাজার ২২ কোটি টাকা। একক মাস হিসেবে এর আগে কখনো এত লেনদেন হয়নি। এর আগে, গত জানুয়ারি মাসে ৭৩ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা লেনদেন করেন গ্রাহকরা। যা এখন পর্যন্ত একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। গত বছরের মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, এক মাসে এত লেনদেন এর আগে কখনো হয়নি। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহক সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাড়ছে এজেন্ট সংখ্যা। মার্চ শেষে ১১ লাখ ৫১ হাজার এজেন্ট ছিল। অবশ্য গত বছরের চেয়ে গত মার্চে গ্রাহক সংখ্যা কিছু কমেছে বলে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯। মার্চ শেষে সেটা কমে হয়েছে ১০ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৪০৫ জন। গ্রাহকের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ও শহরের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ২৫ লাখ। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ও নারী গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদু্যত্-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবামাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে জমা পড়েছে (ক্যাশ ইন) ২৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, উত্তোলন করা হয়েছে (ক্যাশ আউট) ২০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ বাজার দখলে বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে চূড়ান্ত লাইসেন্স না পাওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাবে ঐ প্রতিষ্ঠান হিসাব সংযুক্ত হচ্ছে না। নগদের হিসাব সংযুক্ত হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যাসহ সবগুলো ক্যাটাগরিতে হিসাব বেড়ে যাবে।

এদিকে গত মাস এপ্রিল থেকে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন লেনদেন সীমা অনুযায়ী বিকাশ, রকেট, নগদের মতো আর্থিক সেবার গ্রাহকেরা দিনে ৩০ হাজার টাকা এবং মাসে ২ লাখ টাকা জমা (ক্যাশ ইন) করতে পারছেন। ব্যাংকের হিসাব বা কার্ড থেকে দিনে ৫০ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জমা করতে পারছেন। একইভাবে গ্রাহক দিনে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট) করতে পারছেন। তবে এমএফএস হিসাবের স্থিতি কোনোভাবেই ৩ লাখ টাকার বেশি রাখা যাবে না বলেও বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।

নতুন নির্দেশনা মতে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহকেরা একে অন্যকে দিনে ২৫ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা পাঠাতে পারছেন। আগে প্রতি মাসে একজন গ্রাহক অন্য একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন।

ইত্তেফাক/কেকে