পৃথিবী ও সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে অনেকেই কাজ করেছেন, তারা সবাই যে অসাধারণ, বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছেন, তা কিন্তু নয়। পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই তারা অসাধ্যকে সাধন করেছেন। দীপশিখার মতো আলো ছড়িয়ে দূর করেছেন অজ্ঞতা ও অন্ধকার। মানবতার পরশপাথর হয়ে মানুষের মাঝে যুগিয়েছেন মানুষ হবার প্রেরণা।
সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এমনি একজন মানুষ। শিক্ষাজীবনে মেধা ও প্রতিভার সংমিশ্রণে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণে নানামুখি কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সৃজনশীল উদ্যোগের জন্য অর্জন করেছেন জাতীয় পুরষ্কার। কর্মজীবনেও অব্যাহত আছে এই ধারাবাহিকতা।
বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং গণপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট প্রয়াত সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বাবার প্রেরণায় নিজেকে নিবেদিত করেছেন মানুষের কল্যাণে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
কর্মজীবনে নানান দায়িত্ব পালনকালে মানুষের সম্পৃক্ততাকে প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। কাজ করেছেন সাধারণ মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে। ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদানের পর নরসিংদীকে এক অন্য রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বেকারদের কর্মসংস্থান, প্রতিবন্ধী মানুষে কল্যাণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ, জেলার জীবনমান উন্নত করার প্রয়াসের কারণে নিশ্চয় দীর্ঘদিন জেলার মানুষ কাউনাইনের নাম স্মরণে রাখবেন।
ফারহানা কাউনাইন মনে করেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করা গেলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সম্ভব। এতে টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বাস্তবায়িত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ। কাজের অংশ হিসেবে নরসিংদী জেলার ১১৬৮টি বিদ্যালয়ে স্থাপন করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নার।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী অঞ্চলের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা স্থান পেয়েছে কর্নারে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন দুর্লভ ছবি, জেলার মানচিত্র দিয়ে চকমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে এসব কর্নার। যাতে শিশুরা আকৃষ্ট হন, প্রকৃত ইতিহাস জেনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হন।
এমনকি জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে গেলে যেকারো নজর কাড়বে দৃষ্টি নন্দন আয়োজন। ভবনের সামনে ‘জয় বাংলা চত্বর’ আর ‘জাগ্রত জাতিসত্তা’ সৌন্দর্যের পরিভাষাই যেন বদলে দিয়েছে। সবুজ দুর্বাঘাসের উপর সুশোভিত প্রতিটি গাছেই দেখা মেলে নানা রংয়ের সাজ। বঙ্গবন্ধুর ছবি, বাংলাদেশের মানচিত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন দূরত্বে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রায়ণ।
কার্যালয়ের নীচতলার সিঁড়ির বামপাশে ‘৭১: শেকড়ের মূর্ছনা’ অভিভূত করবে যে কাউকেই। আধুনিক সাজে সজ্জিত এ পাঠাগারটিতে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন নতুন একটি ভুবন। এতে রয়েছে বেশ দুর্লভ কিছু বই। লাল সবুজের সংমিশ্রণে গড়া ওই পাঠাগারটির সব কিছুতেই যেন মুক্তিযুদ্ধের স্পর্শ।
জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রতিটি শিক্ষামূলক কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করেছেন। যাতে মানুষ নিজের কাজ নিজে করতে প্রেরণা পায়। জেলার সৌন্দরর্য বর্ধনের কাজে রেখেছে অনন্য উদাহরণ। তার ভাষায়, জেলাটিকে তিনি দেশের বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ হিসেবে সাজাতে চেষ্টা করেছেন। ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন, ‘জয় বাংলা চত্ত্বর’ নির্মাণসহ সরকারি অফিসে কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন।
‘মমতার পরশ’ সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের আরেক কীর্তি। এই আয়োজনের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগর্ভা মায়েদের সম্মান জানানো হয়। তার দায়িত্ব পালনকালে নরসিংদীতে অভাবনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের উন্নয়নে কাজ করেছেন নিরলস। স্বীকৃতিস্বরূপ ‘দরদী জেলা প্রশাসক’ হিসাবে আখ্যায়িত হন।
কর্মজীবনে সততা ও মেধা এবং সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরষ্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “আমার বাড়ি, আমার খামার” (পূর্বনামঃ “একটি বাড়ি, একটি খামার”) প্রকল্পে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে “শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার” হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে ২০১৩ সালে সম্মাননা পদক, “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৮”, “কর্মসংস্থান নরসিংদী” নামক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে ২০১৯ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে “জনপ্রশাসন পদক”, প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৮”, জাতীয় শুদ্ধাচার নীতিমালা ২০১৭ অনুসারে শুদ্ধাচার চর্চায় অবদানের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ঢাকা হতে শুদ্ধাচার পুরষ্কার ২০২০, ২০১৯ সালে “নরসিংদী জেলার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় নরসিংদী” নামক সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ইনোভেশন শোকেসিং ২০১৯ এ “প্রথম স্থান” অর্জন এবং সর্বশেষ তিনি ‘‘জাতীয় ডিজিটাল পুরস্কার ২০২০’’ অর্জন করেন।
একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা ইচ্ছে করলেই তাঁর কর্মস্থল এবং দায়িত্বে থাকা অঞ্চলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করতে পারেন। আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন সেভাবেই তাঁর মেধা, মূল্যবোধ ও মমতার সংমিশ্রণে কীর্তির মাধ্যমে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। হয়ে উঠেছেন দেশের গর্ব।
চাকরি সূত্রে ফেলোশিপসহ বিভিন্ন উচ্চতর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারত সফর করেন সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। বর্তমানে যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত আছেনসড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন মেধা, মূল্যবোধ ও মমতার সংমিশ্রণে আগামীতেও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন- জন্মদিন এই প্রত্যাশা।