রাজধানীর বিভিন্ন স্হান থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের এক জন শিক্ষক, এক জন কম্পিউটার অপারেটর, এক জন সমাজসেবী এবং এক জন হত্যা মামলার আসামি বলে জানায় র্যাব। এই চার জন সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করত এবং সমাধান দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এ সময় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগামীকাল (আজ) ২০ মে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এ জন্য প্রতারক চক্র তাদের তত্পরতা বৃদ্ধি করে। তিনি জানান, র্যাবও এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ায়। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা মো. ইকবাল হোসেন এবং তার তিন সহযোগী রমিজ মৃধা, নজরুল ইসলাম ও মোদাচ্ছের হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রথমে তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে ঐ নিয়োগ পরীক্ষার স্হান এবং পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।
চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ করানো এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিত। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া হতো এবং তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১ থেকে ২ লাখ টাকা জামানত নেওয়া হতো। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পর পরিশোধ করবে মর্মে চুক্তি করা হতো। এভাবে তারা কয়েক বছর ধরে বিপুল পরিমাণ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতারণার জন্য বিদেশ থেকে আনা ডিজিটাল ডিভাইস দুটি অংশে বিভক্ত। ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ার পিস। এটি পরীক্ষার্থীদের কানের ভেতর সেট করা হয়। আরেক অংশে থাকে গোপন ফোন। এটি শরীরের কোনো এক স্হানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা হয়। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তাদের কাছে পাঠায়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রশ্নের উত্তর চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করে।
র্যাব জানায়, প্রতারক চক্রটির মূলহোতা মো. ইকবাল হোসেন। তিনি ২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলতাফ হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। আলতাফ আগে এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিল। করোনা মহামারির সময় আলতাফ হোসেন মারা গেলে ইকবাল হোসেন প্রতারক চক্রটি পরিচালনা শুরু করে। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা এবং বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।
রমিজ একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি। নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগ দেন। মোদাচ্ছের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সমাজসেবা কর্মী হিসেবে ২০১৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন।