শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে মাছ ধরার চাঁই তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার পরিবার। বছরের বেশির ভাগ সময়ই এসব গ্রামের সকল বয়সের নারী-পুরুষেরা চাঁই বুনে জীবিকা নির্বাহ করছে। ক্ষুদ্র এ কুটিরশিল্পের কাজ করে ভাগ্য ফিরিয়েছে শতশত পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর, পূর্বকৃষ্ণপুর ও উত্তর ডুবলদিয়া গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৫ শত পরিবার মাছ ধরার চাঁই তৈরি করে আসছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা বাঙ্গালীর আবহমান কালের কৃষ্টি। বিশেষ করে দরিদ্র জেলে ও সাধারন গ্রামবাসীরা বছরের সব মৌসুমেই নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও বিভিন্ন জলাশয় থেকে মাছ শিকার করেন। তারা মাছ ধরার জন্য নানা ধরণের উপকরণ ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে জাল, ভেসাল, পলো, বড়শি, কোঁচ, টেটা, যুতি, বইচনা ও চাঁই অন্যতম।
পল্লী অঞ্চলে মাছ ধরার সবচেয়ে পুরনো ও আদি উপকরণের একটি হচ্ছে চাঁই। তিনটি গ্রামে প্রায় ৩০ থেকে ৪০জন উদ্যোক্তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাঁই বুনার ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। পৌষ মাসের শুরু হলে তারা চাঁই বানাতে শুরু করেন। এসব চাঁই তেরির জন্য যশোর ও নড়াইল থেকে বাঁশ আমদানি করা হয়। চাঁই তৈরির জন্য তল্লা ও মাখোল বাঁশ হচ্ছে সবচেয়ে বেশী উপযোগী। প্রতিটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ৬ টি চাঁই তৈরি করা হয় । প্রতি ১০০ চাঁই তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। শ্রমিকরা প্যাকেজ আকারে এসব চাঁই বানানোর কাজ করে। পরিমাণ বা মাপ মতো বাঁশ কাটা, শালতোলা, শাল চাঁছা, সুতা দিয়ে খোল বাঁধা, চটা বাঁধা, টাড় বা মুখ বাধা, চাঁন্দা বা মাছ বের করার তলা তৈরিসহ নানা ধরনের কাজ করার জন্য আলাদা আলাদা শ্রমিক থাকে। এক মৌসুমে প্রায় ৫ লাখ চাঁই তৈরি করা হয়। একেকটি চাঁই তৈরিতে প্রায় ১৫০ টাকা খরচ হয়। একটি চাঁই তৈরি করতে শ্রমিকদের ৭০ থেকে ৮০ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। চাঁই তৈরি করে একজন শ্রমিক গড়ে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন। এসব চাঁই জেলার চাহিদা পূরণ করে মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশালের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় শ্রমিক নুরুজ্জামান, রনজু, জামাল, শফিক, খালেক বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাঁই বানানোর কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। ঋণ নিয়ে চাঁই তৈরির ব্যবসা শুরু করেছিলাম। প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার তৈরি করে সব খরচ দিয়ে বছরে প্রায় ৭/৮ লাখ টাকা লাভ হয়। এছাড়া সরকারি সহায়তা পেলে আমরা আরো বেশি লাভবান হতে পারতাম।
বিসিক শরীয়তপুর এর শিল্পনগরী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অর্ক সরকার বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে জাজিরা উপজেলার তিনটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার চাঁই বুনার সঙ্গে জড়িত। তারা নিজেরা একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পপল্লী গড়ে তুলেছেন। আমরা সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখে এর প্রসার বৃদ্ধির জন্য চাঁই উৎপাদনকারীদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।