আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে নতুন করে ১৩৫ পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।মূলত ফল, ফুল, প্রসাধন সামগ্রী, ফার্নিচার এই চারটি খাতের বিভিন্ন পণ্যে বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করা হয়েছে।
এর ফলে আম, আনারস, আপেল, আঙুর, তরমুজ, পেয়ারাসহ সব ধরনের তাজা ফল আনতে দিতে হবে বাড়তি শুল্ক। তাছাড়া প্রসাধনসামগ্রী, আসবাবপত্র আমদানি করতেও গুনতে হবে বাড়তি কর। এসব পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ এবং সর্বচ্চ ২০ শতাংশ হারে বাড়তি আরডি আরোপ করা হয়েছে। এনবিআর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন শুল্ক হার কার্যকর করেছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গেই সোমবার থেকেই নতুন শুল্ক হার কার্যকর হয়েছে।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর ফলে বাড়তি দামে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও করতে হচ্ছে। আগামী ৯ জুন সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। কোনো পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক কর আরোপের বিষয়টি সাধারণত বাজেটেই সরকার নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু এবার বাজেটের আগেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিল।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শূন্য শতাংশ ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করা হয়েছে, যা ২৩ মে থেকে কার্যকর হয়েছে। এনবিআর বলছে, বাংলাদেশ ফুল ও ফল চাষে যথেষ্ট সমৃদ্ধীশালী। উক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষিরা ন্যাঘ্য মূল্য পাবে এবং ফুল ও ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে করে দেশের প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকসে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। এছাড়াও এ ধরনের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিতকরণের মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে অনেকটাই। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও করতে হচ্ছে। এর ফলে আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার বিলাস দ্রব্যের আমদানি সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানিতে ৫৮ শতাংশ থেকে প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কর রয়েছে, যার মধ্যে ৩ শতাংশ আরডি রয়েছে। নতুন করে এসব ফলের ওপর ২০ শতাংশ আরডি আরোপ হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস আইটেমে ১০৪ শতাংশ থেকে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক-কর রয়েছে। আর ফুল আমদানিতে রয়েছে ৫৮ শতাংশ শুল্ক-কর। এসব পণ্যে বাড়তি সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক কর দিতে হবে। বাংলাদেশ মূলত বিভিন্ন ধরনের কমলা, আপেল, আঙুর, খেজুর, মাল্টা বেশি আমদানি হয়। এর বাইরেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন নতুন ফল আমদানি হচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১০ মে এক পরিপত্র জারি করে আমদানি পণ্যে লাগাম টানতে এলসি মার্জিনের নগদ টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে পণ্য আমদানিকে নিরুত্সাহিত করার পদক্ষেপ নিল। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৪০৮টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুল্ক রয়েছে। নিয়মিত শুল্ক-করের বাইরে পণ্য ভেদে আরডির পরিমাণ ৩ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। যেমন মোটরগাড়ি আমদানিতে রয়েছে ৩০ শতাংশ আরডি, গাড়ির ইঞ্জিন আমদানিতে রয়েছে ৩৫ শতাংশ, চিনি আমদানিতে রয়েছে ৩০ শতাংশ, পেঁয়াজ ৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শুল্ক আইন ১৯৬৯ অনুযায়ী, সংসদের অনুমোদন ছাড়াই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করতে পারে।