বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইমরানের ‘আজাদি মার্চ’ জনসমুদ্র

  • ব্যারিকেড ভেঙে রেড জোনে ঢুকে পড়ল পিটিআই সমর্থকরা
  • নির্বাচন চেয়ে ছয় দিনের আলটিমেটাম
আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ০১:২৪

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বহুল আলোচিত ‘আজাদি মার্চ’ নামের লংমার্চ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। ইমরানের সমর্থকরা পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ইসলামাবাদের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রেড জোনে ঢুকে পড়ে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে এবং জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য এই কর্মসূচি থেকে সরকারকে ছয় দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন ইমরান খান।

‘আজাদি মার্চ’ নিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে ইসলামাবাদে পৌঁছান ইমরান খান। তার গাড়িবহরের পেছনে ছিল রীতিমতো ‘জনতার সমুদ্র’। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জিন্নাহ অ্যাভিনিউতে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আজাদি মার্চ নসাৎ করে দিতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা করেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমাদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তবে আমি দেখলাম, জাতি ভয়মুক্ত হয়েছে। তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি চায়।’

জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ইমরান খান বলেন, ‘আমদানি করা সরকারের প্রতি আমার বার্তা হলো—পার্লামেন্ট ভেঙে দাও এবং নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দাও। অন্যথায় ছয় দিন পর আমি আবার ইসলামাবাদে আসছি।’

সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার পর নেতা-কর্মীদের রেখে নিজ বাসভবনের দিকে রওয়ানা হন ইমরান খান। বড় ধরনের সমাবেশ এবং অবস্হান কর্মসূচিতে যোগ দিতে কয়েক ঘণ্টা মার্চ করে তারা সেখানে জড়ো হন।

বৃহস্পতিবার রাতের অধিকাংশ সময় ডি-চকে অবস্হান নেওয়া পিটিআই নেতাকর্মীরা ইসলামাবাদের বিধিনিষেধ আরোপিত ‘রেড জোনে’ অবস্হান গ্রহণ করেন। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, মার্কিন দূতাবাসসহ কয়েকটি স্পর্শকাতর ভবন রয়েছে। পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর ‘রেড জোনে’ অবস্হিত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্হাপনা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীন সেনা মোতায়েনের এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

জানা গেছে, জাতীয় পরিষদে অনাস্হা ভোটে গত ৯ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশজুড়ে একের পর এক সমাবেশ করেন ইমরান খান। সর্বশেষ ইসলামাবাদ অভিমুখে গত ২৫ মার্চ ‘আজাদি মার্চ’-এর ডাক দেন তিনি। তিনি বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আদায় করবেন তিনি।

পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সরকার পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচনের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আজাদি মার্চ নিয়ে এখানেই বসে থাকব। কিন্তু একটা সুযোগ দিচ্ছি সরকারকে। আমি ইসলামাবাদে অবস্হান নিলে সরকার খুশি হবে। কারণ, এতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের সংঘাত তৈরি করা যাবে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আমাদের ওপর দোষ চাপানো যাবে।’ পিটিআই-এর কর্মসূচি ঠেকাতে এই ‘আমদানি করা সরকার’ গ্রেফতার ও নিপীড়নের ‘কৌশল’ বেছে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইমরান খান। বিষয়টি নজরে নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ইমরান দাবি করেন, পিটিআই-এর আজাদি মিছিলের সময় অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। কর্মসূচিতে নারীদের অংশগ্রহণেরও প্রশংসা করেন তিনি।

স্হানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, ইমরান খানের ডাকে এ লংমার্চের আগে রাজধানী অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বহু সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মসূচির আগেই পুলিশের অভিযানে বহু পিটিআই সমর্থক গ্রেফতার হয়েছেন। পিটিআইয়ের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, ইমরান খানের গাড়িবহর ডি-চকের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ সদস্যরাও হাতে নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। এর আগে পাঞ্জাবে পিটিআইয়ের এই আজাদি লংমার্চ শুরুর সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে এবং পিটিআই সমর্থকদের গ্রেফতার করা শুরু করলে উদ্বেগ ছড়ায়। পিটিআই নেতা শিরিন মাজারি দাবি করেছেন, পুলিশ নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এর আগে ইমরান খান এক ভিডিওবার্তায় সব পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের শহরের রাস্তায় নামতে বলেন।

তবে এই বিশাল কর্মসূচির পরেও নতুন করে নির্বাচনের বিষয়ে এখনই কোনো চিন্তা করছে না বলে জানিয়েছে সরকার। তারা নির্বাচনের আগে ভোটগ্রহণ আইনে সংস্কার আনার কথা বলছে। সম্প্রতি লন্ডনে পিএমএল-এন এর শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেখানেও নির্বাচন বিলম্বিত করার ইঙ্গিত দেন নওয়াজ।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি