শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বগুড়ায় বোরোর ভালো দাম পেয়েও মলিন কৃষকের মুখ!

আপডেট : ২৮ মে ২০২২, ০২:০২

বগুড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাজারমূল্য ভালো হলেও ফলন কমার কারণে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। ধান উৎপাদনে শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া জেলায় কয়েক দফা ঝড় ও বৃষ্টির কারণে মাঠের পর মাঠ পাকা ধান গাছ পানিতে পচে নষ্ট হয়েছে। শ্রমিকসংকট ও শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর ধান উৎপাদন করে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না। ফলন কম হওয়ায় দাম বেড়েও লাভ হচ্ছে না।

এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ধানের হাট বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা। হাট জুড়ে শুধু ধান আর ধান। ভ্যান-ভটভটিতে করে হাটে বোরো ধান বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন কৃষক। ভালো দাম পেয়েও মুখে হাসি নেই তাদের। কারণ এবার বোরোতে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাট জুড়ে ধানের প্রচুর আমদানি হয়েছে। সাতসকালে ভ্যানগাড়ি, ভটভটিতে করে হাটে ধান বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে সরগরম হাট। হাটের লোকজন বলেন, সোমবার ও শুক্রবার এখানে হাট বসে। দুই সপ্তাহ আগে এই হাটে গড়ে ৫ কোটি টাকার ধান কেনাবেচা হয়েছে। এখন ধানের আমদানি কিছুটা কমেছে। ধানের দামও বেড়েছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনিকেট হিসেবে পরিচিত সরু ধান হাটে প্রতি মণ ১ হাজার ১২০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাটারিভোগ জাতের সরু ধান ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রি-২৮ জাতের ধান বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দরে। চিনিগুঁড়া সুগন্ধি ধান বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ দরে। কৃষকেরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বাজারমূল্য ভালো হলেও ফলন-বিপর্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলন বিপর্যয়ের কারণে এবার বিঘাপ্রতি গড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৯ লাখ ৬ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন। এবার ঝড়-বৃষ্টি এবং ধান কাটার শ্রমিকসংকটের কারণে এপ্রিল মাসের শেষ থেকে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। হাটে আসা কৃষকেরা জানান, এপ্রিল মাস থেকে ঘনঘন ঝড়-বৃষ্টির কারণে মাঠে বোরো খেতের ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে পাকা ও আধা পাকা ধান। এতে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। অন্যবার বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ধানের ফলন হলেও এবার বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মণ। এতে ভালো দাম পেয়েও উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি তারা।

গতকাল শুক্রবার এই হাটে ২০ মণ ধান বিক্রি করতে আসেন নন্দীগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আফতাব আলী। তিনি বলেন, ‘এবার ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। বোরোর জমি পত্তনি খরচ বিঘায় ৮ হাজার টাকা। আছে হালচাষ, সার, কীটনাশক, সেচ, কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ। গতবার বোরো ধান কাটার খরচ ছিল বিঘায় ৩ হাজার টাকা। এবার শ্রমিক কম। ধান কাটতেই মজুরি গুনতে হয়েছে বিঘায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। সব মিলে বিঘায় বোরো চাষে খরচ গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ১৬ মণ। ১ হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করে ১৬ হাজার টাকা পেয়েছি। বিঘাপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪ হাজার টাকা।’ বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ 

ইত্তেফাক/এএইচপি