শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৯০০ অনিবন্ধিত ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা 

আপডেট : ৩০ মে ২০২২, ০৭:৩৩

সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অনিবন্ধিত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযানে নেমেছে স্বাস্হ্য অধিদপ্তর। গতকাল রবিবার পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৯০০ অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ, সিলগালার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে দণ্ডও। জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়, র্যাব ও পুলিশ এ অভিযানে অংশ নেয়। রাজধানীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৫৪টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে মহত্ হিসেবে আখ্যায়িত করে স্হানীয় জনগণও এ ব্যাপারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, অনিবন্ধিত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অভিযান অব্যাহত থাকবে। চলমান অভিযানে স্থানীয় সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সুপারভিশন ও মনিটরিং বিভাগের ২৬ মের সভায় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তিন দিনের আলটিমেটাম গতকাল সকাল ৮টায় শেষ হয়। এরপর থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান। যশোরে একটি ক্লিনিকসহ ছয়টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন  ডা. নাজমুস সাকিব রাসেলের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়। যশোরের পিস হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নূরুল ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোটারি হেলথ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিএমসি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধনের কাগজপত্র না পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

অনিবন্ধিত প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে মাগুরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ সময় শহরের ভায়না রোকেয়া প্রাইভেট হাসপাতাল, একতা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম, নিরাময় প্রাইভেট হাসপাতাল, রিফাত ফার্মেসি, শাহানা মেডিক্যাল সার্ভিসেস, অরো ডেন্টাল কেয়ার, সুখী নীলগঞ্জ প্রজেক্ট স্বাস্থ্যসেবাসহ সাতটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাগুরা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহিদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে যেসব হাসপাতালের নিবন্ধন নেই, লাইসেন্স নেই, ওষুধ ফার্মেসির ড্রাগ নিবন্ধন নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইলে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ১৭টি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরো কয়েকটি ক্লিনিককে জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় দিনব্যাপী অভিযানে এসব ক্লিনিককে সিলগালা ও জরিমানা করা হয়। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় প্রথমদিনের অভিযানে টাঙ্গাইল সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ১৭টি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়। আরো কয়েকটিকে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। বরিশালের গৌরনদীতে শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে চারটি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। হবিগঞ্জের মাধবপুরে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে প্রশাসন। চট্টগ্রামে হাসপাতালের লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র না পাওয়া, পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে শনিবার নগরীতে চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। শেরপুরে মোট ৪২টি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরের ৭২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ২৬টি, শ্রীবরদী উপজেলায় ছয়টি, ঝিনাইগাতীতে তিনটি, নালিতাবাড়ীতে পাঁচটি এবং নকলাতে দুটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। নরসিংদীতে নিবন্ধনহীন পাঁচটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ফরিদপুরে জেলা সদরসহ পাঁচ উপজেলার অবৈধ ২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালাসহ এক জনকে আটক করা হয়। 

ইত্তেফাক/কেকে