বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইউক্রেন সংকটের বলি হতে পারে মহাকাশ স্টেশন

আপডেট : ৩১ মে ২০২২, ১৩:১০

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মহাকাশ কর্মসূচির উপরেও পড়ছে। ফলে আইএসএস-এর ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। মহাকাশে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

আইএসএস-এর মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে মহাকাশচারীরা শাকসবজি চাষ করেন, ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতি পরীক্ষা করেন। উপর থেকে তারা পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেন। সেইসঙ্গে হাইটেক উপাদানও পরীক্ষা করেন, যেগুলি হয়তো কোনোদিন চাঁদের উপর স্টেশন তৈরির প্রচেষ্টা সম্ভব করবে।

তবে স্পেস স্টেশনে থাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো পৃথিবীর দৃশ্য দেখার সুযোগ৷ জার্মানির মহাকাশচারী আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট একবার বলেছিলেন, জানালা দিয়ে পৃথিবীর অসাধারণ সুন্দর দৃশ্যের অভাব অবশ্যই অনুভব করবো। কক্ষপথ থেকে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত সত্যি অনবদ্য৷ অনেকবার দেখলেও প্রতিবার চোখে পানি চলে আসে।

আরও কত মহাকাশচারী আইএসএস থেকে সেই দৃশ্য দেখতে পাবেন, তা স্পষ্ট নয়। কারণ মডিউলগুলি পুরানো হয়ে গেছে৷ এখনই ঘনঘন বিকল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এই স্টেশন চালানোর খরচ অত্যন্ত বেশি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগীদের মধ্যে চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হচ্ছে। এসা ও নাসা চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়াতে চায়।

কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার ফলে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার মহাকাশ কর্মসূচির উপরেও প্রভাব পড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপাতে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা রাশিয়ার হাইটেক আমদানির প্রায় অর্ধেক বিচ্ছিন্ন করে দেবো বলে আমাদের অনুমান। সেনাবাহিনীর আধুনীকিকরনের ক্ষমতার উপর আমরা আঘাত করবো। এর ফলে মহাকাশ কর্মসূচিসহ তাদের এয়ারোস্পেস শিল্পের মান কমে যাবে।

প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস আইএসএস-এ সহযোগিতার সমাপ্তি এবং স্টেশনের রুশ অংশটি বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে। সংস্থার প্রধান দিমিত্রি রোগোসিন এক টুইট বার্তায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে পশ্চিমা বিশ্ব এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। কারণ রাশিয়ার মহাকাশ যানগুলি নিয়মিত আইএসএস-কে নির্ধারিত কক্ষপথে ফিরিয়ে আনে। গ্যাসের অণুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে সেটি প্রতিদিন ৭০ মিটার করে উচ্চতা হারায় বলে এমনটা করা জরুরি।

অন্যদিকে, আবার রসকসমসও নাসার উপর নির্ভরশীল। বিদ্যুতের সিংহভাগই মার্কিন মডিউল থেকে আসে৷ নাসার ক্যাথি লুয়েডার্স বলেন, আমাদের পক্ষে একা সেটি চালানো অত্যন্ত কঠিন হবে। আইএসএস এক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফসল। পারস্পরিক নির্ভরতার ভিত্তিতেই সেটি সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ সে কারণেই এটি অসাধারণ এক কর্মসূচি।

পশ্চিমা বিশ্বের মহাকাশ সংস্থাগুলি বেশ কিছুকাল ধরেই রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি সংস্থাগুলিও এই ব্যবসায় অংশ নিচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগেই মানুষ ও রসদ মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে এবং কক্ষপথ থেকে আইএসএস-এর বিচ্যুতি সংশোধনের চেষ্টা চলছে।

কিন্তু তার জন্য আরও সময় লাগবে। তাই আইএসএস অক্ষত রাখতে হলে আপাতত রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের সামনে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

ইত্তেফাক/টিআর