সাভার উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার নামে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতিনিয়তই অপচিকিত্সা এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানেই ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উপজেলার সাভার ও আশুলিয়া থানা এলাকায় শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে বেশি ভাগেরই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই। অনুমোদনবিহীন এসব ক্লিনিক বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। অধিক মুনাফার লোভে প্রয়োজনীয় দক্ষ চিকিৎসক ছাড়া হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চলছে সেবা। ফলে মাঝেমধ্যেই হাসপাতালগুলোতে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে।
বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার নার্সদের স্বল্পতা রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মানা হয় না নিয়ম। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। কোনো রকম একটি ভবন ভাড়া নিয়েই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও রি-এজেন্ট, ভুয়া রিপোর্ট, অদক্ষ ডাক্তার, নার্স ও নোংরা পরিবেশে পরিচালিত হয় এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাভারে অধিক জনসংখ্যার তুলনায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল হওয়ায় যত্রতত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এসব হাসপাতালে দক্ষ চিকিৎসক কিংবা প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা এসব হাসপাতালে এক শ্রেণির দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীদের আনা হয়। পরে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না দিয়েই মোটা অঙ্কের বিল নেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা এলাকাভিত্তিক মাস্তানদের মাসোহারা দিয়ে থাকে। ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় কোনো রোগী মারা গেলে কিংবা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে মাস্তানরা রোগীর আত্মীয়স্বজনদের মামলা করা থেকে বিরত রাখা এবং এ বিষয় নিয়ে যাতে কোনো বাড়াবাড়ি না হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অনেক ক্লিনিকের সাইনবোর্ডের আড়ালে মাদক ব্যবসা ও অবৈধ গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সাভারের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে ছয়টি হাসপাতাল সিলগালা, ১০টিকে সাড়ে প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা জরিমানা, এক ক্লিনিক মালিককে কারাদণ্ড করলেও থেমে নেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অপতত্পরতা। অভিযান চালানোর কয়েক মাস পর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুরনায় এসব প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, সাভার উপজেলায় লাইসেন্সবিহীন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানও চলতে দেওয়া হবে না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিধি মেনেই চালাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।