শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হোটেল বয় হিসেবে কাজ করবে হাবিবের রোবট

আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১৫:৩৫

আহসান হাবিব (১৮)। লালমনিরহাটে রোবট তৈরিতে প্রথমবারের মতো সাফল্য এনেছেন। তিনি কালীগঞ্জ সরকারি করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামের মজু মিয়ার ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আহসান হাবিব সবার ছোট। ইউটিউব ভিডিও দেখে এক মাসের প্রচেষ্টায় এ রোবটটি বানিয়েছেন তিনি। 

নির্মাতা জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি হোটেলের হোটেল বয় হিসেবে কাজ করবে এ রোবটটি। এটি দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন।

হাবিব জানান, রোবটটি মানুষের দেহের সঙ্গে মিলের পাশাপাশি সাবলীল ভাষায় কথার উত্তর দেওয়া, হালকা ও ভারী কাজ করতে সক্ষম। অচেনা লোককে মনে রাখা, মানুষের ছবি ও কথা রেকর্ড রাখতে পারা, হ্যান্ডশেক ও অঙ্গভঙ্গিও করতে পারে এ রোবটটি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতেই এটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন এর তরুণ নির্মাতা। 

কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহবি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আহসান হাবিব নতুন কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখতেন বাল্যকাল থেকেই। কিন্তু বাবা দরিদ্র কৃষক থাকায় তার প্রতিভাকে সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত করতে পারছিলেন না। ২০১৭ সালে তুষভান্ডার আর এমএমপি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় পড়ার সুবাদে স্কুলের ফান্ডের টাকায় বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষে একটি রোবট বানানোর সুযোগ পেয়ে তিনি লালমনিরহাট জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। 

এর কিছু দিন পর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবাকে হারিয়ে তার জীবনে অমানিশা ঘনিয়ে আসতে শুরু করে। পিতাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন হাবিব। থেমে যায় তার স্বপ্ন, লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খান তিনি। শুরু হয় তার কঠিন জীবন সংগ্রাম। তবুও দিশেহারা হয়ে পড়েননি এ স্বপ্নবাজ তরুণ। 

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত মোট ১২টি টিউশন করেই নিজের পরিবার ও লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে চলেছেন। টিউশনের সামান্য সঞ্চয় ও ধার-দেনা করেই এবার তিনি একটি হোটেলের জন্য এ রোবটটি বানিয়েছেন।

আহসান হাবীব বলেন, স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় প্রথম আপডেট কিছু করার লক্ষ্যে রোবট বানাই। সে মেলায় আমি জেলায় চ্যাম্পিয়ন হই। মূলত ইউটিউব দেখেই এ কাজে আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। এ কাজে আমি আমার মা, বড় ভাই, চাচা সবার আন্তরিক সহযোগিতা সবসময় পেয়েছি। আমার এ কাজে সবসময় সহযোগিতা করেছেন আমার বন্ধু। 

হাবিবের মা খালেদা খাতুন বলেন, আমার ছেলের এমন কাজে আমি খুবই আনন্দিত। ছেলের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রতিবেশী মজনু মিয়া বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া হাবিবের এ কাজে গ্রামের সবাই আমরা খুশি। তার এ কাজ গ্রামের সুনাম ও সম্মান বাড়িয়ে দেবে।’

ইত্তেফাক/মাহি