শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ক্লাইমেট ক্যাম্পের দ্বিতীয় সিজনের উদ্বোধন

'পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে তরুণদের কথা বলতে হবে'

আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ২১:১২

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হচ্ছে ক্লাইমেট ক্যাম্পের দ্বিতীয় সিজন। আর্থ সোসাইটির উদ্যোগে এ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার (৫ জুন) দুপুর ৩টায় জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের এলডি হলে সিজনের উদ্বোধন করা হয়। চলবে ৭ জুন পর্যন্ত।

পরিবেশের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ২০২১-২০৩০ সালকে জাতিসংঘ দশক ঘোষণা করে আর্থ সোসাইটি। এ বছর ক্লাইমেট ক্যাম্প থেকে আগামী ১০ বছরের কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার ছিল দৈনিক ইত্তেফাক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'পরিবেশ নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। ২০৫০ সালে পরিবেশ-প্রকৃতি যেমন হওয়ার কথা, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ত্বরান্বিত হওয়ায় ২০৩০ সালেই আমরা সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো। আমরা কি এর জন্য প্রস্তুত? তাই আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের তরুণদের কথা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণরা যদি দূষণে বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে যারা দূষণের সাথে জড়িত তারাও পরিবেশ দূষণের আগে অন্তত একবার ভাববে।'

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ/ইত্তেফাক

সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, 'ক্লাইমেট পার্লামেন্ট এর বয়স প্রায় এক যুগ হয়ে এলো। আমরা প্রথমে কাজ শুরু করি রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে, আমাদের ফোকাসটা সেখানেই ছিল। আপনারা যারা ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন বা আমাদের রিনিউয়েবল এনার্জি  নিয়ে কাজ করেন, আপনারা  জানেন যে আমাদের রিনিয়েবল এনার্জি অথোরিটি আছে। এটি টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।'

'এই স্রেডাকে ফরমেশন করার কাজে আমরা ক্লাইমেট পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে একটি শক্ত ভূমিকা রেখেছিলাম এবং পরবর্তী সময়ে আমরা বিভিন্নক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে রিনিউয়েবল এনার্জির ক্ষেত্রে এচিভমেন্ট, সেগুলো তুলে ধরে এই অগ্রগতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করি।'

এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, "এবার 'টপ ২৬' যখন শুরু হয় তার আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের ক্লাইমেট পারলামেন্টের যে রিজিওনাল হেড ছিলেন, তারা সবাই মিলে একটি ইনিশিয়েটিভ শুরু করেন, আপনারা হয়তো জানেন, 'ওয়ান সাম ওয়ান গোল'। যার কারণে আমরা এবার প্রায়োরিটি দিচ্ছি রিজিওনাল গ্রিডকে। বাংলাদেশে আমাদের যে ভূখণ্ড, যে ভূখণ্ড অনুযায়ী আমরা সৌরশক্তি বলি বা বায়ুচালিত বিদ্যুৎ, আমাদের রিসোর্সের যেরকম অভাব আছে, সেরকম কিন্তু আমরা হয়তো উৎপাদন করতে পারবো না।"

তিনি বলেন, 'আমরা ক্লাইমেট পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে একটি ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি যে, আমরা রিজিওনাল গ্রিড থেকে প্রমোট করবো, যে ভারত, নেপাল, ভুটান এই যে আমাদের সাউথ এশিয়ান যে রিজিওনগুলা আছে এগুলোকে ওয়ান গ্রিডের মাধ্যমে সংযুক্ত করা যেন আমরা রিনিওয়েবল এনার্জি গুলোকে কানেক্ট করতে পারি।'

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, 'পরিবেশ দূষণের ফলে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই আগামী প্রজন্মকে নিজেদের কথা বলতে হবে। আমরা যদি এই প্রজন্মকে সচেতন করতে পারি তাহলেই পরিবর্তন আনা সম্ভব। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রক্তিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে, পরিবেশন বান্ধব ইটের ব্যবহার বাড়ানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে সোলার এনার্জি আছে। আমরা চেষ্টা করছি সারাদেশে এটাকে ছড়িয়ে দিতে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা কার্বণ নিঃসরণ বন্ধ করতে না পারলে ৪০ মিলিয়ন মানুষ এর ক্ষতির শিকার হবে। আর আর্থিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪৫ বিলিয়ন ডলার।'

ওয়াল্টনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তানভীর আঞ্জুম বলেন, '১৫ বছর আগে আমরা দেশের বাইরের পণ্য ব্যবহার করতাম। আজ দেশের ৭৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ওয়াল্টনের দখলে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। সেই সঙ্গে বিশ্বের ৪০ টি দেশে আমরা পণ্য সরবরাহ করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'নিজেদের জায়গা থেকে আমরাও পরিবেশ নিয়ে সচেতন। আমাদের 'বেটার বাংলাদেশ টুমোরো' কার্যক্রমের অধীনে ইতোমধ্যে সোলার পাওয়ার প্লান্ট বানাতে সক্ষম হয়েছি। সারাদেশে আমরা ৩ হাজার শপসের ব্যবস্থা করেছি। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের পরিবেশ নিয়ে সচেতন করার কাজ করা হচ্ছে।'

'ওয়াল্টন চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব পরিবেশের ক্ষতি না করে পরিবেশকে রক্ষা করা যায়। প্রতিবছর আমরা সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ ফ্রিজ বিক্রি করি। পরিবেশ রক্ষার্থে ক্ষতিকর সিএসসি গ্যাস ব্যবহার থেকে আমরা সরে এসেছি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ১৬ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলেই আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব।'

বক্তব্য দিচ্ছেন দ্য আর্থ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ/ইত্তেফাক

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, কোথাও সুন্দর পরিবেশ না থাকলে শিক্ষা আর সচেতনতার কথা বলার সুযোগ সেখানে কম। আমরা যদি আমাদের সব কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবেশকে না রাখি, তাহলে একসময় আমরাই থাকবো না।

টেকসই পৃথিবী, ভবিষ্যতের জন্য যুবকদের পৃথক পদক্ষেপ ও তাদের নিজস্ব আইডিয়া বা ধারণা দিতে উৎসাহিত করতে ক্লাইমেট ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে। তাদের এই ধারণা ও বিভিন্ন কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে বেছে নেওয়া হবে সেরা তিন বিজয়ীকে। তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ক্লাইমেট ক্যাম্প ফেলোশিপের অধীনে যেকোনো একজন ক্লাইমেটপ্রেনারের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে ১ লক্ষ টাকা।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের সঙ্গে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ/ইত্তেফাক

ক্লাইমেট ক্যাম্পের সহযোগী হিসেবে রয়েছে ‘বেটার বাংলাদেশ টুমরো (ওয়ালটনের একটি টেকসই উদ্যোগ)’। আয়োজনের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রয়েছে ‘ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ’। এছাড়া ক্লাইমেট ক্যাম্প আয়োজনের অংশীজন হিসেবে সঙ্গে রয়েছে ইএমকে সেন্টার ঢাকা, এসবিকে টেক ভেনচার, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও ইয়ুথ নেট।

দ্য আর্থ সোসাইটি একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্যা আর্থ সোসাইটি শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২০ পুরস্কার লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি গত ১৫ বছর ধরে তরুণ এবং পরিবেশ নিয়ে কাজ করে আসছে।

ইত্তেফাক/এসটিএম