শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মির্জাপুরে নদীভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী 

আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১১:৩৮

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে নির্মিত গাইড বাঁধ হঠাৎ ধসে পড়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই গাইড বাঁধ নির্মিত হয়েছে। এদিকে, বাঁধ উপেক্ষা করেই ভাঙছে প্রতিবছর। কিন্তু বছর ৮ না পেরোতেই এবার ধস। এলাকায় তীব্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ (বালির ব্যাগ) ফেলছে বাঁধ এলাকায়।

মঙ্গলবার (৭ জুন) হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ হোসেন  জানান, বংশাই নদীর সন্নিকটে হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ. হাট ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, মির্জাপুর-বাসাইল রাস্তা, ফতেপুর-মহেড়া-মির্জাপুর রাস্তাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট ফতেপুর হাট ও বাজার রয়েছে। নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশ ভেঙে পড়েছে। এখন পুরো এলাকা হুমকির মুখে। 

এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হলেও প্রতি বছর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। 

ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, বংশাই নদীর ভাঙনের ফলে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ্বরসহ ১০-১২টি গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে। ইতোমধ্যে কুরনি-ফতেপুর-বাসাইল রাস্তা ভেঙে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তারা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড থলপাড়া মাদরাসা এবং ফতেপুর বাজার এলাকায় ৩৩ হাজার জিও ব্যাগ (বালির বস্তা) ফেলে ভাঙন ঠেকানোর জন্য কাজ করছে।

গুনটিয়া এলাকার বাসিন্দা তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজিসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, লৌহজং নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি,  পুষ্টকামুরী, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ভাঙনে দিশেহারা।ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ ফসলি জমি। 

লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন,  ‘বংশাই নদীর থলপাড়া ব্রিজ, ত্রিমোহন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন ব্রিজ, কোদালিয়া লতিফপুর ব্রিজ, হাটুভাঙ্গা ব্রিজ, লৌহজং নদীর উপর নির্মিত গুনটিয়া ব্রিজ, বরাটি এলাকায় বাবু দুঃখীরাম রাজবংশী ব্রিজ, পুষ্টকামুরী ব্রিজ, পাহাড়পুর ব্রিজ, বহুরিয়া এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নুরু ব্রিজ এবং ওয়ার্শি ব্রিজ হুমকির মুখে । 

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মির্জাপুর উপজেলার হাট ফতেপুর বাজার ও স্কুল রক্ষার জন্য বংশাই নদীর পাড়ের গাইড বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ হোসেন জানিয়েছেন। এ ছাড়া, এই ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রাম ও আশেপাশেও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বরাদ্দ আরও বাড়ানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি মাননীয় সংসদ সদস্য এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।

এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, বংশাই ও লৌহজং নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জেনেছি। এলাকা পরিদর্শন করে ও উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/মাহি