রায়গঞ্জে লাম্পি স্কিন ডিজিসের (এলএসডি) ব্যাপক প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৩ হাজার ১৬টি খামারে মোট গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৭৩। ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার গরু। মারা গেছে ছয়টি। সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিনের সংকট হওয়ায় খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চান্দাইকোনা ইউনিয়নের কোদলা গ্রামের খামারি খোকন দাশ জানান, তার গাভির ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ হয়েছে। খামারের অন্যান্য গরু নিয়ে তিনি আতঙ্কে আছেন। সেগুলো রক্ষায় সরকারি কোনো ভ্যাকসিন পাননি। বাজারে এক অ্যাম্পুল ভ্যাকসিনের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা ১০টি গরুকে প্রয়োগ করা যায়। এই ভ্যাকসিনও স্থানীয় ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। শহর থেকে আনতে হয়।
একই ইউনিয়নের সিমলা গ্রামের রবিউল ইসলাম, বিরেন হালদার, জেলাগাঁতী গ্রামের আব্দুল করিম, সোনারাম গ্রামের সাইদুল ইসলাম, ধামাইনগর ইউনিয়নের সাদরা গ্রামের খামারি ফরিদুল ইসলাম, শিবপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন ও নবাব আলী আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা নিয়ে একই রকম হতাশার কথা জানালেন। তারা জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি একটি প্রকল্পের অর্থে মাত্র ২ হাজার গরুকে প্রয়োগ করার মতো ভ্যাকসিন কিনেছেন। তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। আরো ১ লাখ ভ্যাকসিনের জরুরি চাহিদা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, এলএসডি আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া গুটি গুটি আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এলএসডি গরুর জন্য একটা ভয়ংকর ভাইরাসবাহিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ। এই রোগে গড় মৃত্যুহার আফ্রিকায় ৪০ শতাংশ। মূলত আফ্রিকায় একাধিক বার মহামারি আকারে দেখা গেলেও আমাদের দেশে গরুতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কখনো মহামারি আকারে দেখা যায়নি। একটা খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দেওয়ার জন্য এফএমডি বা খুরারোগের চেয়ে এই রাগ অনেক বেশি ভয়ংকর হিসেবে ধরা হয়। এতে এক বছরের কম বয়সী বাছুর গরু মারা যায় বেশি।