বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘ভাচু‌র্য়ালি’ ক্লাস করে এসএসসি পরীক্ষা

আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ০২:০০

করোনা মহামারিতে দুই বছর ভাচু‌র্য়ালি ক্লাসের পর দেশে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। আগামী ১৯ জুন এই পরীক্ষায় বসছে সারা দেশের ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু কেমন হবে তাদের পরীক্ষা? তা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজন ও কর্তৃপক্ষের আছে নানামুখী উৎকণ্ঠা। শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের সশরীরে আরো ক্লাসের দরকার ছিল। তাছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা নানা কারণে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা তেমন কাজে লাগাতে পারেনি।

উল্লেখ্য, লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।

২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা দেশে স্কুলগুলো টানা ৫৪৩ দিনের বেশি বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে পুনরায় চালু হয়। তারপর আবারও স্কুল বন্ধ হয়। ২০২০ সালে যারা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তারাই এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী। তাদের একজন ফাইয়াজ বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষার্থী। সে জানায়, অনলাইনে ক্লাসগুলো তার কাছে মন্দের ভালো মনে হয়। কারণ একটা বিষয় না বুঝতে পারলে তা শিক্ষককে প্রশ্ন করে বুঝে নেওয়ার কোনো উপায় ছিল না। দীর্ঘ দিন পর স্কুল খুললেও তাদের যে গ্যাপটা ছিল তা সম্পূর্ণ পূরণ হয়নি। এমন অবস্থায় হঠাৎ এই জানুয়ারিতে তাদের বিজ্ঞান, আইসিটি, ধর্ম তিনটি বিষয় বাদ দিয়ে একটি বিষয় কৃষি শিক্ষা দেওয়া হয়। অল্প হলেও তারা ঐ তিনটি বিষয় পড়েছিল। কৃষি শিক্ষার কিছুই জানা নেই তাদের। পরীক্ষার আগে নতুন একটি বিষয় পড়া যেমন বিরক্তিকর, তেমন উচ্চমাধ্যমিকে আইসিটি বিষয় থাকলে তারা আবার একটা গ্যাপে পরে যাবে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অহনা তৃপ্তি ঘোষ জানায়, তাদের গ্রুপভিত্তিক বিষয়গুলো ক্লাসে যেভাবে জানা যেত অনলাইনে সেভাবে জানা যায়নি। কষ্ট হয়েছে। তাই বিষয়গুলোর সশরীরে ক্লাসে আর একটু পড়ার সুযোগ থাকলে ভালো হতো। আবার তাদের ১৮ মাসে কোনো পরীক্ষা হয়নি। ফলে সরাসরি বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তাদের জন্য একটু ভীতিকরও বটে।

চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গতবারের তুলনায় ২ লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ পরীক্ষার্থী কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মান উন্নয়নের পরীক্ষার্থী এ বছর নেই। গতবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আবশ্যিক বিষয়ে, সে কারণে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী নেই বললেই চলে।

অভিভাবকদের একজন কানিজ ফেরদৌস বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললেও হিসেবে ক্লাস হয়েছে দুই মাস। ফলে আরো কিছু দিন ক্লাস করার সুযোগ দিয়ে তাদের পরীক্ষাটা আর কিছু দিন পরে হলে ভালো হতো।’ আরেক অভিভাবক রত্না বলেন, আমার স্বামীর চাকরি ছিল না। ফলে এমবি কিনে ক্লাস করা কষ্টকর ছিল। আমি ছেলেকে কোনো শিক্ষকের কাছেও দিতে পারিনি। আবার নিজেও সৃজনশীল অঙ্ক বুঝি না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলগুলোতে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। ছেলের পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

সিনিয়র শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা ঠিক, তারপরও টিভি চ্যানেল, জুম ও গুগলে অনলাইন ক্লাস এবং কিশোর বাতায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার সুযোগ ছিল। যদিও সবাই সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারেনি।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) গবেষণায় দেখা যায়, কমপক্ষে ২২ শতাংশ প্রাথমিক এবং ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী স্কুল বন্ধ থাকায় লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ব্যতিরেকে শুধু স্কুল খুললে লার্নিং লস এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করা যাবে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘যে সব বিষয় উচ্চ শিক্ষায় প্রয়োজনীয় নয় সে সব বিষয় বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের সবার অনলাইনে পড়ার সুযোগ নেই। তাই এবছর শুরু থেকে সশরীরে ক্লাসে সিলেবাস শেষ করেই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।’

ইত্তেফাক/ ইআ