উত্তর কোরিয়া গত বছর তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে আনুমানিক ৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ করেছে বলে ধারণা দিয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন।
কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নাস্তানুবাদ হওয়া সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্রের নতুন পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে, পশ্চিমাদের এমন অনুমানের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচিতে তাদের সম্ভাব্য ব্যয়ের বিষয়ে এ ধারণা মিলল। পরমাণু কর্মসূচিতে উত্তর কোরিয়ার ব্যয় কিংবা এর ভাণ্ডারে কত পারমাণবিক অস্ত্র আছে সে বিষয়ে কখনোই নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০০৬ সালের পর ২০১৭ পর্যন্ত এটি অন্তত ছয়টি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে। এরপর আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা না চালালেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে তাদের ‘যুদ্ধপ্রস্ত্ততির জানান দিচ্ছে’।
বিশ্ব জুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে খরচ নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস (আইক্যান) বলছে, উত্তর কোরিয়া তাদের মোট জাতীয় আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সামরিক খাতে, আর তার (সামরিক ব্যয়) ৬ শতাংশের মতো পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে খরচ করছে, এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তারা গত বছর পরমাণু কর্মসূচিতে পিয়ংইয়ংয়ের সম্ভাব্য ব্যয় অনুমান করেছে।
তাদের এই অনুমান সত্যি হলে, আইক্যান পরমাণু শক্তিধর যে ৯টি দেশ নিয়ে কাজ করে, তাদের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচিতে সবচেয়ে কম খরচ করা দেশের তালিকায় প্রথমেই উত্তর কোরিয়ার নাম আসবে। তারপর যে দেশটির নাম আসবে, সেটি পাকিস্তান; এ খাতে যার ব্যয় উত্তর কোরিয়ার দ্বিগুণ। পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর আরো জোরদার নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রচার চালিয়ে যাওয়া দেশগুলোর নেতা যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য সংকট ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে থাকা পিয়ংইয়ংয়ের সামরিক খাতে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের তীব্র সমালোচনা করে আসছে।
তবে উত্তর কোরিয়া বলছে, আত্মরক্ষার খাতিরে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে তার। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হুমকির মুখে দেশের সুরক্ষায় এ কর্মসূচি প্রয়োজনীয় বলেও দাবি করে আসছে তারা। তবে মহামারির কারণে দেশটি পরমাণু কর্মসূচিতে খরচ কমিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় নজর রাখা বিশ্লেষক, বিদেশি কর্মকর্তা ও স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান পারমাণবিক চুল্লি, ইউরেনিয়াম খনি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণকাজ ও নানান কর্মকাণ্ডে তারা অস্ত্র ভাণ্ডারের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল, তার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে প্রকাশিত বার্ষিক এক প্রতিবেদনে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট বলেছে, উত্তর কোরিয়ার ২০টির মতো ওয়ারহেড এবং ৪৫ থেকে ৫৫টি পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকরণ আছে বলে ধারণা তাদের। তারা বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের কেন্দ্রে এখনো সামরিক পরমাণু কর্মসূচিই আছে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বশেষ প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কাছে অস্ত্র বানানোর মতো মাত্রার প্রায় ৫০ কেজি প্লুটোনিয়াম এবং ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে। সিউল ২০১৬ সালেও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে এমন ধারণা দিয়েছিল, তারপর থেকে তাদের ধারণা অপরিবর্তিতই রয়েছে।