শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট আসন্ন

আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ০৬:০০

চরম খাদ্যসংকটের মুখে সারা বিশ্ব। চলতি বছরের শেষ দিকে সংকট গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও বলেছে, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতেই ভূমিকা রাখেনি, বরং সরবরাহ ব্যবস্থাও বিঘ্নিত করেছে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের ফলনও কম হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলে আসা সংকটকে আরো প্রকট করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারা বিশ্বকেই এক চরম সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে এই যুদ্ধ।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে ৩ হাজার কোটি ডলারের জরুরি তহবিল ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বিষয়ক যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু অর্থ ছাড় হয়নি সেসব প্রকল্পে এই অর্থ ছাড় করবে বিশ্বব্যাংক। এ অর্থায়ন খাদ্য ও সার উৎপাদনকে উত্সাহিত করবে। একই সঙ্গে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাণিজ্য ব্যবস্থা সহজীকরণ ও দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে এই তহবিলের অর্থ থেকে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিল ম্যালপাস বলেছেন, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র দেশের মানুষ চরম বিপদে রয়েছে। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এসব দেশকে নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে। তিনিও ব্যয় সাশ্রয়ী একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণের জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জুড়ে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন লক্ষণীয়। দেশ দুটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান দানাদার শস্যের রপ্তানিকারক দেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশগুলোও সতর্কতা অবলম্বন করছে। নিজেদের চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রাখতে গিয়ে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ জারি করেছে। ফলে, গরিব ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য খাদ্যসংকট নতুন চ্যালেঞ্জ জুড়ে দিয়েছে। জ্বালানি খাতও সংকটে থাকায় ইতিমধ্যেই অনেক দেশ ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এদিকে, শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর বাইরে অন্যান্য দেশগুলো রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ফলে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। খাদ্যপণ্যের এই সংকটকালে নিজেদের মজুত জোরদার করতে কয়েকটি দেশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরমধ্যে রয়েছে ভারত, সার্বিয়া, কাজাখিস্তান, কসোভো, মিশরসহ কয়েকটি দেশ। আবার কোনো কোনো দেশ সংকটকালে রপ্তানি বাড়িয়ে বেশি আয়ের চিন্তাও করছে। কোনো কোনো দেশ উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছে। যেমন থাইল্যান্ডের ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির ফেডারেশন অফ থাই ইন্ডাস্ট্রিয়ের (এফটিআই) চেয়ারম্যান ক্রিয়েংক্রাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশ্ব খাদ্য ঘাটতির মধ্যে থাইল্যান্ডের রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। কারখানাগুলো কাঁচামাল প্রস্তুত করছে। খাদ্য সরবরাহ সংকটে মূল্যস্ফীতিও এখন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আর এই মূল্যস্ফীতির কারণে সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা করেছে গবেষণা সংস্থাগুলো। এমনকি জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলিও সিএনএনকে বলেছেন, মানুষ পরিবারবর্গ ও বিশেষ করে শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারলে নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। যেসব দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই, সেখানে চরমপন্থি রাজনৈতিক শক্তিগুলো এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। এরপর সেখানে দুর্ভিক্ষ হবে, দাঙ্গা হবে. আর অনিবার্যভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিণতিতে গণ-অভিবাসন ঘটবে। এ বছর খাদ্যের দাম বাড়লেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু আগামী বছর বাজারে খাদ্যপণ্য সুলভ নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইত্তেফাক/ইআ