শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রংপুরে একযুগেও সড়ক থেকে খুঁটি সরেনি

আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৬:৪৩

রংপুর নগরীর ১৬ কিলোমিটার সড়কজুড়ে থাকা পুরনো বৈদ্যুতিক খুঁটি এক যুগেও সরানো হয়নি। সড়কের ওপরের এসব খুঁটি না সরানোর দায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), বিদ্যুৎ বিভাগ বা সিটি করপোরেশন কেউ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই খুঁটি অপসারণ ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ এবং কেবল লাইন সরাতে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৪ কোটি টাকা গত ২০১০ সালে রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বরাদ্দ দিলেও গত ১২ বছরে কাজ হয়নি। সেইসঙ্গে বাস্তবায়নও হয়নি পুরাতন খুঁটি অপসারণ প্রকল্প।

রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, ‘নগরীর ভেতরে ১৬ কিলোমিটার সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। বিদ্যুতের খুঁটি সরানো বা দেখভালের বিষয়টি তারা দেখবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হবে।’

নগরবাসীর অভিযোগ, নগরীর ব্যস্ততম সড়কের পাশ থেকে এসব খুঁটি না সরানোয় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটিতে যানবাহনের ধাক্কা লেগে প্রায় ঘটছে ছোট-ছোট দুর্ঘটনা। সড়ক চলাচলে পথচারীরা পড়েছেন ঝুঁকিতে।

রংপুর সওজের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জুনে রংপুর শহরের পুরনো ১৬ কিলোমিটার সড়কে চার লেন কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এতে ব্যয় ধরা হয় ১২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভূমি হুকুম দখলের জন্য ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ, বিদ্যুৎ, টেলিফোনের খুঁটি অপসারণ, ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ এবং কেবল লাইন সরাতে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে আরও প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই সড়কের উদ্বোধন করেন। কিন্তু ১২ বছর পর এসেও ১৬ কিলোমিটার সড়কজুড়ে থাকা বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি এখনো সরানো হয়নি।

রংপুর নগরজুড়ে দেখা যায়, ১৬ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হয়েছে। তবে কলেজ রোডের খামার মোড় এলাকায় সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের বাসায় ঢোকার পথে রয়েছে একাধিক খুঁটি। নগরীর দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, সাতমাথা এলাকায়  একাধিক পুরাতন খুঁটি রয়েছে। কলেজ রোডের কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের পাশে, কাচারিবাজার এলাকায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অফিসের সামনেও রয়েছে এসব খুঁটি। কোনো কোনো খুঁটি মূল সড়ক থেকে প্রায় ১০ ফুট সড়কের ভেতরে অবস্থিত। এতে অনেক যানচালক ও পথচারীর বিপদে পড়তে হচ্ছে। খুঁটিকে সাইড দিতে গিয়ে অনেকটা ঘুরে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

মাইক্রো চালক রশিদুল ইসলাম বলেন, সড়কের প্রায় অর্ধেকজুড়ে বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া খুঁটির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীদেরও চলাচলে দারুণ অসুবিধা হচ্ছে। বেশি সমস্যা হয় লালবাগ ও খামার মোড় এলাকায়।

নগরীর লালবাগ এলাকার হাফিজুর ইসলাম বলেন, ‘সড়কের ওপর খুঁটি থাকার কারণে লালবাগে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই। সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। খুঁটি পার হতে না পেরে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনসহ রিকশা-অটোরিকশা এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। রেলঘণ্টি পড়লে পথচারীদের সমস্যার অন্ত নেই।’ 

কারমাইকেল কলেজের একাউন্টেন্ড বিভাগের ছাত্রী পূজা সরকার জানান, খুঁটিগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো সরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় দেয়া উচিত। খুঁটিগুলোর সঙ্গে অনেকে সাইকেল হেলান দিয়ে রাখেন। অনেক খুঁটির সামনে আবার ভ্যান ও রিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে রাস্তায় নানা সমস্যাসহ জ্যাম বাধে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী বলেছেন, ‘সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। বিদ্যুতের খুঁটি সরানো বা দেখভালের বিষয়টি তারা দেখবেন। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশনের যেসব সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ছিল, সেগুলো আমরা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিয়েছি। উন্নয়নকাজে যে খুঁটিগুলো সমস্যা করছিল বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়ে সেগুলো সরিয়ে কাজ করেছি।’

রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, ‘সড়কের ওপর কোনো ইলেকট্রিক পোল থাকার কথা নয়। সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর প্রয়োজন হলে নেসকোর সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করে সরানো হয়।’

রংপুর নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-১) মো. আশরাফুল ইসলাম মন্ডল বলেছেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ বা সড়ক বিভাগ যারই সড়ক হোক, খুঁটি থাকলে সরাতে আমাদের চিঠি দিতে হয়। একইসঙ্গে খুঁটি সরাতে যে অর্থের প্রয়োজন হবে, সেটাও সেই দপ্তরকে দিতে হয়। আমি যতটুকু জানি সড়কটি সওজের। খুঁটি সরাতে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসেনি।’

ইত্তেফাক/মাহি