শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাবিতে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের ‘চাকরির মেয়াদবৃদ্ধি বাতিলের চেষ্টা’

আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ২১:৫২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শিক্ষকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আগামী ২৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সভায় আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (অবসর গ্রহণ) (বিশেষ বিধান) আইন ২০১২’র ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক বলছেন, সংস্থাপন মন্ত্রাণালয়ের জারিকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক বছর কর্মরত থাকার আইন পরিবর্তনের অধিকার একমাত্র রাষ্ট্রের।

‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১২’ এর ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত, বলবৎ অন্য কোনো আইন, অধ্যাদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ, বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি, বিধি, প্রবিধি, উপ-আইন বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো দলিলে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বছর বয়স পূর্তিতে চাকরি হইতে অবসর গ্রহণ করিবেন।

জানা যায়, ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সরকার ‘গণকর্মচারী অবসর আইন ১৯৭৪’ সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধি প্রসঙ্গে একটি গেজেট জারি করে। এতে অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধি করা হয় এবং এলপিআরে থাকা মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের পুনঃনিয়োগের বিধান রাখা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও পরে তা কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির নিয়ম চালু রয়েছে।

এদিকে, সংশোধিত ‘গণকর্মচারী অবসর আইন ১৯৭৪’ অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার ৪ নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সংবিধিবলীর ১৪ নম্বর ধারার সংশোধন করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ৬৬ বছর করা হয়। তবে এ বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১২’ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাসহ শিক্ষকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক হলেন সাবেক উপ-উপাচার্য ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আমির হোসেন। তিনি ২০২১ সালে চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপনার (আমির হোসেন) ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ও ২১ সেপ্টেম্বরের চিঠি এবং ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর ও এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, ২০১৫ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত সিনেট সভার সিদ্ধান্ত এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হলো।

তবে আগামী আগস্ট মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক উপাচার্য পদের জন্য দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে উপাচার্যের দৌঁড়ে অধ্যাপক মো. আমির হোসেন অনেকটা এগিয়ে আছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ বর্তমান উপাচার্যের হস্তক্ষেপে অধ্যাপক মো. আমির হোসেনের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো সিদ্ধান্ত বাতিলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এবিষয়ে অধ্যাপক মো. আমির হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১২’ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে সিনেট সভায় মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জেনেছি। তবে এ আইন মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্র প্রদত্ত সুবিধা হরণ করার জন্য নয়। এতে যা আছে সবকিছু কর্মক্ষেত্র ও পেশাগত বিষয়ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণকেও অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তবে জাবি প্রশাসনের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের রাষ্ট্র প্রদত্ত সুবিধা হরণ করার চেষ্টা শেখ হাসিনা সরকারের নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। একজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক হিসেবে আমার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর পর, তা পুনরায় হ্রাসের চেষ্টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বেদনাদায়ক।’

এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

ইত্তেফাক/মাহি