বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বন্যায় স্বাস্থ্য সমস্যায় সর্তকতা ও করণীয় 

আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৬:২৩

বন্যায় দেশের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হওয়ায় সেখানকার জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। এর মধ্যে পানি ও কীটপতঙ্গ বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবই বেশি।

বন্যায় চরম ভোগান্তিতে থাকা মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। কারণ বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একাকার হয়ে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর এভাবেই বিস্তার বেড়ে যায় সংক্রামক ব্যাধির। 

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়

বন্যার সময় রোগবলাই 

  • পেটের পীড়া: ডায়রিয়া, কলেরা, ডিসেন্ট্রি (আমাশয় ও রক্ত আমাশয়), টাইফয়েড। এ ছাড়া বেড়ে যায় কৃমির প্রকোপ । 
  • বুকের প্রদাহ: কফ, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি হয়ে থাকে। শিশুদের এমন স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি হয়।  
  • জ্বর: নানা রকম ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল জ্বর হয়ে থাকে। 
  • চর্মরোগ: খোস পাঁচড়া, ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ প্রভৃতি চর্মরোগ হতে পারে। স্ক্যাবিস, আঙুলের মাঝখানে ঘা, টিনিয়া ইনফেকশন এ সময়ে খুব বেশি দেখা যায়। 
  • চোখের প্রদাহ: কনজাংটিভাইটিস, আইরাইটিসও হতে পারে বন্যায়। 
  • মশাবাহিত রোগ: ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু। আটকে থাকা পানিতে এই রোগের জীবাণুগুলো সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে।

যদি ব্লিচিং পাউডার না থাকে তাহলে এক ঘণ্টা টিউবওয়েলের পানি চেপে বের করে ফেলতে হবে

পানি যেভাবে বিশুদ্ধ করবেন

  • বন্যার সময় পানির উৎস দূষিত হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিদিন পান করাসহ গৃহস্থালির অন্যান্য কাজে পানি ব্যবহার করতেই হয়। বন্যায় পানি ভালোমতো ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে তবেই ব্যবহার করা উচিত। 
  • বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে গেলে এক কলস পানিতে তিন থেকে চার চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নিয়ে টিউবওয়েলের ভেতর সেই পানি ঢেলে আধা ঘণ্টা রেখে দিবেন। তারপর একটানা আধা ঘণ্টা চেপে পানি বের করে ফেলে দিতে হবে। এরপর সেই পানি খাওয়ার উপযোগী হতে পারে। 
  • যদি ব্লিচিং পাউডার না থাকে তাহলে এক ঘণ্টা টিউবওয়েলের পানি চেপে বের করে ফেলতে হবে। তবে নিরাপত্তার জন্য টিউবওয়েলের পানিও ভালোমতো ফুটিয়ে নেয়া উচিত। পানি ছেঁকে জ্বলন্ত চুলায় একটানা ৩০ মিনিট টগবগিয়ে ফুটিয়ে তারপর ঠাণ্ডা করতে হবে। 
  • পানি ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি দেড় লিটার খাওয়ার পানিতে ৭.৫ মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট (হ্যালো ট্যাব), তিন লিটার পানিতে ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এবং ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। 
  • বাসার পানির ট্যাংকের প্রতি এক হাজার লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার এক ঘণ্টা রাখলে পানি বিশুদ্ধ হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ভাইরাস জীবাণু ধ্বংস হয় না। 

বন্যার সময় পানির উৎস দূষিত হয়ে যায়

রোগবালাইয়ে করণীয় 

  • ডায়রিয়া: ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। তখন লবণ ও পানির অভাব পূরণ করাই হলো এর একমাত্র চিকিৎসা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন বা ওআরএস না থাকলে বিকল্প হিসেবে লবণ-গুড়ের শরবত খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি, কিছু পাওয়া না গেলে শুধু নিরাপদ পানি খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শরীরে লবণ পানির ঘাটতি পূরণ হবে। 
  • চর্ম রোগ: বন্যার পানি গোসল বা গায়ে লাগানো থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এ পানির সংস্পর্শে বিভিন্ন চর্ম রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সব সময় পানির সংস্পর্শে থাকার জন্য হাতে-পায়ে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া, স্ক্যাবিস জাতীয় নানা ধরনের ত্বকের অসুখ হয়ে হতে পারে। এ ধরনের চর্মরোগ দেখা দিলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। 

প্রলয়ংকরী বন্যাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজন ভীষণভাবে দীর্ঘকালীন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন

বন্যা পরবর্তী সময়ে করণীয়

  • বন্যা পরবর্তী সময়ে যেসব রোগ-বালাই হয়, তার সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। পানি নেমে গেলে বাড়িঘর সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। একই সঙ্গে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • বন্যা শুধু শারীরিক ক্ষতিই করে না বরং মানসিক চাপও তৈরি করে। প্রলয়ংকরী বন্যাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজন ভীষণভাবে দীর্ঘকালীন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত বাসস্থান ঠিক করা, অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা ইত্যাদি বিষয়সমূহ মানসিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
  • বন্যা পরবর্তী সময়ে যেসব মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, রাগ, হতাশা, অস্বাভাবিক নিদ্রালুতা, হাইপার এক্টিভিটি, ইনসোমনিয়া হতে পারে।
  • তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে সব ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে সুস্থ থাকতে হবে। এ জন্য দরকার ধৈর্য ও সাহস। জীবনকে জয় করার মধ্যেই সার্থকতা। তাই বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে নিজেকে সুস্থ রাখতে চেষ্টা করবেন। যাতে আগামী দিনগুলোর জীবনযুদ্ধে আপনি জয়ী হতে পারেন। 

 

 

ইত্তেফাক/আরএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন