রংপুর নগরীর মর্ডান মোড় এলাকার কাছে এক গৃহবধূকে রিকশা থেকে নামিয়ে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার (২৬ জুন) বিকেলে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও মামলার প্রধান আসামি বাবু পলাতক রয়েছেন। পরে দণ্ডপ্রাপ্তদের পুলিশি পাহারায় আদালতের হাজতখানা থেকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন রংপুর নগরীর এরশাদ নগর এলাকার মো. আব্দুল জলিলের পুত্র আসাদুল ইসলাম, আউয়াল মিয়ার পুত্র রঞ্জু মিয়া ও কেডিসি রোড এলাকার আব্দুস ছাত্তারের পুত্র বাবু মিয়া।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৬ মে তারিখে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রিকশাযোগে লালবাগ মোড় হয়ে নগরীর মর্ডান মোড় যাচ্ছিলেন ওই গৃহবধূ (২৪)। এ সময় তিন আসামি ওই রিকশার গতিরোধ করে তাকে টেনে-হিঁচড়ে রিকশা নামায়। পরে নগরীর খামার এলাকার পূর্ব দিকে গাছের নিচে খুপড়ি ঘরে ওই গৃহবধূকে নিয়ে গিয়ে তিন ধর্ষক মিলে ধর্ষণ করে।
ওই নারীর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে আসামি আসাদুলকে আটক করে। এ সময় অন্যান্য আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী মাহিগজ্ঞ পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলে পুলিশ এসে আসামী আসাদুলকে নিয়ে যায়।
ঘটনার দিন ওই নারী নিজেই বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। পুলিশ ধর্ষিতা গৃহবধূর মেডিক্যাল পরীক্ষা রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে করান। পরে ফরেনসিক বিভাগ গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রদান করে।
কোতয়ালী থানার এস আই আজিজুল ইসলাম তদন্ত শেষে প্রধান আসামি বাবুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ১০/৯/২০০৭ ইং তারিখে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মামলাটি বিচার চলাকালীন ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামী বাবু , আসাদুল ও রঞ্জু মিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন সময় থেকেই আসামী বাবু পলাতক ছিলো। রায় ঘোষনার সময় আসামি আসাদুল ও রঞ্জু মিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলো। বিচারক পলাতক আসামী বাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ দেন এবং গ্রেফতার হবার দিন থেকে রায় কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট রফিক হাসনাইন জানান, বাদী পক্ষ ন্যায় বিচার পেয়েছে। এ রায়ে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবী রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।