পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে জর্ডানের রাজধানী আম্মান ও ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আনন্দ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। আদ্দিস আবাবা দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনন্দ উৎসবের অনুষ্ঠানে দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, স্থানীয় ও বিদেশি অতিথি এবং ইথিওপিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এ আনন্দ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত বাণী আগত অতিথিবৃন্দের উদ্দেশ্য পাঠ করে শোনানো হয় ও দেশের অব্যাহত উন্নতি ও অগ্রগতি বর্ণনা করে মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য—উপাত্ত প্রদান করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অদম্য সাহসিকতায় বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা নদীর বুকে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘পদ্মা সেতু‘ নির্মাণ করায় আজ সমগ্র দেশ ও জাতি গর্বিত। তিনি বর্তমান সরকারের মেয়াদে বাস্তবায়িত বিভিন্ন মেগা প্রকল্প যেমন- মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ আরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা তুলে ধরেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ‘পদ্মা সেতুর‘ শুভ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ও প্রামাণ্যচিত্র মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আগত অতিথিবৃন্দদের উদ্দেশ্য দেখানো হয়। বাংলাদেশের ‘পদ্মা সেতুর‘ শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপস্থিত গণ্যমান্য অতিথিদের নিয়ে একটি বিশেষ কেক কেটে উৎসব উদ্যাপন করা হয়। পরে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি এবং ইথিওপীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।
এদিকে জর্ডানের আম্মানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বিপুল আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘পদ্মা সেতু’র উদ্বোধন অনুষ্ঠান উদযাপন করেছে।
শনিবার (২৫ জুন) আম্মানে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যগণ ও কিছু জর্দান নাগরিক দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে এই আনন্দ উদযাপন করেন। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
দূতাবাস প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান রঙ্গিন বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুরু করেন। এরপর রাষ্ট্রদূত স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান তাঁর বক্তব্যর শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হল। এর ফলে শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পে অগ্রসর এই অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। জর্দান নাগরিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আনন্দ উদযাপন করে।
রাষ্ট্রদূত বক্তব্যে আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদন ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতি বছর ০ দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে অনন্য অবদান রাখবে।
নাহিদা সোবহান বলেন, বিশ্বব্যাংক সহ অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের সকল মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। এ সেতুর বাস্তবায়নে সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ সহ সকলকে বাংলাদেশ হতে সরাসরি পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে দেখানো হয়। অতঃপর দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জর্ডানি ব্যান্ডের বাজনার তালে এই আনন্দ মেলা আরও মুখরিত হয়ে উঠে।