শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মার্কোস জমানায় ফিরলো ফিলিপাইন!

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন মার্কোস জুনিয়র

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ০১:৫৬

ফিলিপাইনের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রয়াত নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে। তার মা আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন তার জুতার বিশাল সংগ্রহের জন্য। তাদের ছেলে ৬৪ বছর বয়সি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র গত মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। গতকাল বৃহস্পতিবার বংবং নামে পরিচিত এই রাজনীতিকের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রায় তিন যুগ পর আবারও মার্কোস জমানায় ফিরল দেশটি!

এক গণ-অভু্যত্থানের মুখে ১৯৮৬ সালে ক্ষমতাচু্যত হয়েছিলেন ফার্দিনান্দ মার্কোস। এ পরিবার বিশ্ব জুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করে তাদের দুর্নীতির জন্য। গণ-অভু্যত্থানের বিপ্লবী কর্মীরা যখন ম্যানিলায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিল, তখন সেখানে মার্কোস পরিবারের বহু চমত্কার তৈলচিত্র, সোনায় মোড়ানো জাকুজি, ১৫টি মিংক কোট, ৫০৮টি ডিজাইনার গাউন এবং ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের তিন হাজার জোড়া জুতার সংগ্রহ দেখতে পান। মার্কোস পরিবার কীভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বেআইনিভাবে সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে, কীভাবে নিউ ইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটানে কয়েকটি বাড়ি কিনেছে, তার দলিলও পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়। কিছু মামলায় পরিবারের সদস্যদের দণ্ড হয়, অন্য কিছু মামলায় তারা খালাস পান। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে নিউ ইয়র্কে প্রতারণার আলোচিত একটি মামলায় ইমেলদা মার্কোস জুরিদের বিচারে খালাস পান এবং তিনি আবার ফিলিপাইনে ফিরে আসেন।

পরিবারের এমন কুখ্যাতির পরও বংবং মার্কোজের ভূমিধ্বস জয়ে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। বংবং এর বিরোধী শিবিরের লোকজন এজন্য দায়ী করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। তাদের মতে, এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, মার্কোস পরিবারের কলঙ্কময় অতীত মুছে ফেলা হয়েছে। তবে মার্কোস পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বরং তাদের দাবি নির্বাচনে এই পরিবারের প্রতি জনগণের আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।

অন্যদিকে বংবং-এর জন্মই যেন হয়েছে নেতা হওয়ার জন্য, সেভাবেই ছোটবেলা থেকে তাকে বড় করা হয়। গণবিক্ষোভের মুখে ১৯৮৬ সালে যেদিন মার্কোস পরিবারকে প্রাসাদ ছাড়তে হয়, সেদিনের কিছু ফুটেজে দেখা যায়, ২৮ বছর বয়সি বংবং সামরিক পোশাকে তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বংবং ১৯৭৫ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ফিলসোফি, পলিটিক্স অ্যান্ড ইকোনোমিক্স (পিপিই) পড়ার জন্য, যেটিকে রাজনীতিতে কেরিয়ার গড়ার জন্য আদর্শ একটি কোর্স বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি যদিও বংবং তা অস্বীকার করেন। এত বিতর্ক সত্ত্বেও রাজনীতিতে এক জাঁকালো কেরিয়ার গড়তে বংবং এর কোনো অসুবিধা হয়নি। দেশে ফিরে আসার পর ফিলিপাইনের রাজনীতিতে দিনে দিনে বংবং-এর অবস্হান আরো শক্তিশালী হয়েছে।

বিপুল ভোটে জয়ী হওয়া বংবং-এর রানিং মেট ছিলেন সদ্য সাবেক হওয়া প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে। সারা আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গতকাল নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ উপলক্ষ্যে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা জুড়ে ১৫ হাজারের মতো নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়। অভিষেকের কয়েক দিন আগেই কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন মার্কোস জুনিয়র, কিন্তু তার পরও তার প্রেসিডেন্ট হতে কোনো বাধা নেই বলে রায় দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বংবং-এর এই অভিষেকের মধ্য দিয়ে মার্কোসদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে কয়েক দশকের সংগ্রামের সফল সমাপ্তি ঘটল। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি