শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি হুমকির মুখে

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২২, ১৭:২৭

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মুক্ত গণমাধ্যমের র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বেশ পিছিয়েছে। তাহলে কি ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমশ হুমকিতে পড়ছে? সাংবাদিক মুহাম্মদ যুবায়েরের গ্রেপ্তারের পর প্রশ্নটি আরো বড় হয়ে উঠেছে। 

তথ্য যাচাই সংক্রান্ত ওয়েবসাইট অল্ট নিউজ-এর প্রতিষ্ঠাতা যুবায়েরকে চার বছর আগের এক টুইটের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।  ২০১৮ সালে এক টুইটে ‘হানিমুন হোটেল'-এর ছবি শেয়ার করলেও যুবায়ের হোটেলের নাম বদলে দিয়ে লিখেছিলেন, ‘হনুমান হোটেল‘। সম্প্রতি এক টুইটার ব্যবহারকারী সেই টুইট রিটুইট করে দাবি করেন, এর মাধ্যমে দায়িত্বশীল সাংবাদিক যুবায়ের হনুমানের প্রতি হিন্দুদের শ্রদ্ধাকে কটাক্ষ করেছেন এবং এর ফলে তার ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত পেয়েছে।

যুবায়ের মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই করতেন, ছড়িয়ে থাকা ভুল তথ্য সম্পর্কে সবাইকে অবগত করতেন এবং ভারতে বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে হেটস্পিচ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করতেন।

অল্ট নিউজ-এর প্রতিষ্ঠাতা যুবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয় এমন এক সময়ে যখন ভারতে  ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের এক নেতার বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে। বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মা এক টেলিভিশন বিতর্কে মুসলমানদের নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যের প্রতিবাদ শুরু হয় ভারত এবং ভারতের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নূপুর শর্মাকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়নি।

ভারতের অঙ্গীকার

মুহাম্মদ যুবায়ের গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছিলেন। সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলো ‘২০২২ রেজিলিয়েন্ট ডেমোক্র্যাসিজ স্টেটমেন্ট'-এ স্বাক্ষর করে। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকার করেন। 

মুহাম্মদ যুবায়েরের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার মনে করেন, তার মক্কেলের গ্রেপ্তারিও প্রমাণ করে যে, ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত খর্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, তার মক্কেল সাংবাদিক এবং তিনি ক্ষমতাবানদের বিষয়ে সত্যি কথা বলতেন বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো অনেকেই সেই ছবি শেয়ার করেছেন, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- এমন দাবি করে ব্রিন্দা বলেন, ‘‘ তাদের সঙ্গে আমার মক্কেলের পার্থক্য বিশ্বাসে, নামে এবং পেশায়।''

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন যুবায়েরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছে।

ভারতে সঙ্কুচিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

গত মে মাসে ২০২২ সালের মুক্ত গণমাধ্যম বিষয়ক র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। সেখানে দেখা যায় ভারত ২০২১ সালের ১৪২তম স্থান থেকে পিছিয়ে ১৫০-এ চলে এসেছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপ এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২১ সালে ভারতে সাংবাদিক এবং সংবাদ মাধ্যমের ওপর মোট ১২১টি হামলা হয়েছে।

এ সময়ে হামলায় অন্তত ছয়জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। ১২১টি হামলার মধ্যে  কমপক্ষে ৩৪টির জন্য দায়ী বিভিন্ন বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই রাজনৈতিক কর্মী হলেও মাফিয়া, অনলাইন ট্রলাররাও রয়েছেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২১ সালে ভারতে আটজন নারী সাংবাদিকও গ্রেপ্তার হয়েছেন বা পুলিশের অভিযোগ অথবা যৌন নিপীড়নের মুখে পড়েছেন। 

 

ইত্তেফাক/এসআর