শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পদ্মা সেতু: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে ভাঙ্গা-টেকেরহাট-রাজৈর 

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২২, ১৪:১৭

পদ্মা সেতু চালুর পর অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন টেকেরহাট বন্দরসহ রাজৈরবাসী। রাজধানীর সঙ্গে সড়ক পথে সহজ যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় শিল্প কারখানা গড়ার পরিকল্পনা করছেন অনেকেই। ফলে এই এলাকার জমির দাম বাড়তে শুরু করেছে।

গত ২৫ জুন উদ্বোধন হয়েছে পদ্মা সেতু। পরের দিন ২৬ জুন থেকে ছুটছে যানবাহন। সড়কে নামছে নিত্যনতুন এসি যাত্রীবাহী বাস। সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ত্রি-মোহনার সীমান্ত রেখায় অবস্থিত   টেকেরহাট বন্দরে গড়ে উঠতে যাচ্ছে নতুন নতুন শিল্পকারখানাসহ রাইস মিল ও ডাল মিল। সুযোগ তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। 

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিভিন্ন প্রকারের যান চলাচল কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই উপজেলায় এখনো দুই লেনের মহাসড়ক রয়ে গেছে। ফলে যানজট লেগেই থাকে সবসময়। চলাচল সুগম করতে মহাসড়কটি ৬ লেনে রুপান্তর করা জরুরি হয়ে পড়েছে।   নাহয় পদ্মা সেতুর সঠিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা সময়ের দাবি।

টেকেরহাটের ভূমি ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাস্তার পাশের জমির মূল্য বেড়ে গেছে। দূর-দূরান্তের অনেক ব্যবসায়ী জমি কিনতে টেকেরহাটে ভিড় করছেন। 

টেকেরহাট বন্দরের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বিশেষ করে ইলিশ মাছের মোকাম বলে খ্যাত বরিশালের ইলিশ মাছ টেকেরহাট বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত গতিতে পৌঁছাতে পারছে। আগে পচনের ভয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হতো না । এখন সহজে ও অল্প সময়ে পৌঁছানো যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে, সড়কটি প্রশস্ত না হলে সমস্যা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। 

টেকেরহাট উত্তরপাড় (মুকসুদপুর) অংশে ভুসিমালহাটের বণিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বেপারী বলেন, আমাদের টেকেরহাট উত্তরপাড়ে ৪০টি ডাল মিল ও ১০টি রড সিমেন্টের দোকান ও কয়েকটি তেল মিল রয়েছে। এই ডাল মিল থেকে উৎপাদিত ডাল দেশের মোট চাহিদার ৩ ভাগের এক ভাগ চাহিদা এখান থেকে মিটিয়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে এখানে আরও অনেক ডাল মিলসহ বিভিন্ন শিল্পকারথানা গড়ে উঠবে। 

টেকেরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও টিন ব্যবসায়ী কেরামত আলী ফকির বলেন, টেকেরহাট বন্দরের মহাজনপট্টিসহ বন্দরে কয়েক হাজার দোকানপাট ও ১৬টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেন করে থাকে। বিভিন্ন পণ্য বিক্রি বৃদ্দির সঙ্গে লেনদেন কয়েকগুণ বৃদ্ধি হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে আমরা ঢাকা থেকে নৌপথে মালামাল আনতাম। এতে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগতো মালামাল আসতে। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যোগাযোগ সুবিধার কারণে আমরা দ্রুত মালামাল আনতে পারছি। ফলে আমাদের লেনদেন বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতারাও কাঙ্ক্ষিত সময়ে পণ্য হাতে পাবে।

টেকেরহাট বন্দরের মহাজনপট্টির স্টেশনারি পাইকারি বিক্রেতা সঞ্জয় বলেন, আমরা আগে ঢাকা থেকে নৌকায় মালামাল আনতাম, তাতে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগতো এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে মালামাল পেয়ে যাই। এতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। 

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষার সুবিধা, কৃষকদের উন্নয়ন ও মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডয়াম সদস্য ও  মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মুমূর্ষু রোগী ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা তেমন কোনো বিলম্ব হবে না। বরিশালের সম্ভাবনাময় খাত ইলিশ মাছ ঢাকায় বা দেশের অন্যকোনো অঞ্চলে নিতে নিতে পচে যাবে না। এতে সরাসরি জেলে লাভবান হবে। পাশাপাশি কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত বাজারে নিয়ে বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারবে। 

সংসদ সদস্য আরও বলেন, এই এলাকায় গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার বেকার যুবকের। ফলে টেকেরহাট বন্দর, মাদারীপুর, বরিশালসহ দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন ও পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেরও ব্যাপক উন্নয়ন হবে এবং দেশের জিডিপি আরও প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

ইত্তেফাক/মাহি